উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে সাতক্ষীরায় নাগরিক কমিটির মানববন্ধন

‘উপকূল রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’- স্লোগানে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা ঘোষণা, পৃথক উপকূলীয় বোর্ড গঠন এবং জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দসহ ২১দফা দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি।

সোমবার (৩১ মে) বেলা ১১টায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে সাতক্ষীরা ডিসি অফিস সংলগ্ন সড়কের উপর দাঁড়িয়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে শতশত কোটি টাকা লুটপাট করা হয়। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে চলে সীমাহীন দুর্নীতি। আর এসকল দুর্নীতির সাথে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকার বিগত ৯ বছরে বেড়িবাঁধ সংস্কারে ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাঁধা হয়নি উপকূলীয় বাঁধ। সাতক্ষীরার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারে সরকার শতশত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে সেই বাঁধ সংস্কার করা হয়নি। যেকারণে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ও সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে দক্ষিণ জনপদের কয়েক লক্ষ মানুষ। শুধু তাই নয়, স্থানীয় জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ সংস্কার করে আর বিল তুলে নেয় সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।’

বক্তারা আরো বলেন, ‘সরকার বরাদ্দ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার নিয়োগ করেন। সেই ঠিকাদার কাজ না করে অপেক্ষা করতে থাকেন আরও একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের। দুর্যোগের পরে ওই ঠিকাদার বলেন কাজ তো করেছিলাম কিন্তু সব ভেসে গেছে জলোচ্ছাসে। এভাবে প্রতিবারই কাজ না করে বিল তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু সরকারের কোন সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এব্যাপারে মুখে ছিপি মেরে রাখে। তারাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলেনা।’

বক্তারা বলেন, ‘উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়।’

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-সদস্য সচিব এড. আজাদ হোসেন বেলাল, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন-উর রশিদ, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাংলাদেশ জাসদ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, উত্তরণের এড. মুনিরউদ্দিন, সুশীলনের দেবরঞ্জন বিশ্বাস, শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম রবি, আক্তারুজ্জামান মহব্বত, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, পানি কমিটির নেতা আবেদার রহমান, নাগরিক নেতা মফিজুর রহমান, সূর্যের আলোর বার্তা সম্পাদক মুনসুর রহমান প্রমুখ।

সমগ্র মানববন্ধন কর্মসূচি পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল।

দুর্যোগপূর্ণ বৃষ্টিমূখর আবহাওয়া মধ্যে মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলা বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকসহ শতাধিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে বক্তারা আরো বলেন, ‘সিডর, আইলা, বুলবুল, মহাসেন, ফণী, আম্পান, ইয়াসের মতো প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড়ের সাথে লড়াই করে উপকূলের মানুষ আজও বেঁচে আছে। প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ত্রাণের নামে চলে চরম দুর্নীতি। কখনো কখনো ত্রাণের যে তালিকা করা হয় তার চেয়েও কম মানুষ ওই এলাকায় বসবাস করে। একটি বিশেষ মহলের দ্বারা বলানো হয়-‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বাঁধ চাই।’

বক্তারা বলেন, ‘আমরা ত্রাণও চাই, টেকসই বেড়িবাঁধও চাই। উপকূল রক্ষা করতে হলে টেকসই বেড়িবাঁধের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সেই বাঁধ বাঁধতে হলে বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি।’

বিগত সময়ে যারা বাঁধের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে নয়-ছয় করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান বক্তারা।

বক্তারা এসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদী ভাঙন ও জলাবন্ধতা কবলিত উপকূলীয় এলাকাকে ‘দুর্যোগ প্রবন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন, দুর্যোগের কারণে এই এলাকা থেকে ব্যাপকহারে অভিবাসন বন্ধ করে বিশেষ বরাদ্দ ও অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ, জলাবদ্ধ ও ভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র মানুষের জন্য স্থায়ী রেশনের ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, সামগ্রীক উন্নয়ন অংশিদার সুনির্দিষ্ট এসডিজি অর্জনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গৃহীত ডেল্টা ও ব্লু প্লানের আওতায় টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতসহ ২১ দফা দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানান।