এবার ৩ লাখ ৬০ হাজার টনেরও বেশি পাথর গায়েব!

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েবের সুরাহা না হতেই একই জেলার পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির (এমজিএমসিএল) খনি থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টনের বেশি পাথর গায়েব হয়ে যাওয়ার তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।

৫৬ কোটি টাকা মূল্যের এ পাথরের মধ্যে মূল্যবান অ্যামেলগেমেট গ্রানাইট পাথর ও শিলা রয়েছে। শিউরে ওঠার মতো তথ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কোটি কোটি টাকার কয়লা গায়েব করে দেয়ার সঙ্গে জড়িত চক্রটি পাথর খেয়ে ফেলার সঙ্গেও জড়িত।

ছোট্ট ভূখণ্ডের সামান্য কিছু খনিজসম্পদের অধিকারী এ দেশের খনিজসম্পদগুলো যদি এভাবে লুটেরা-দুর্নীতিবাজরা হজম করে ফেলে, তবে মানুষ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হবে বৈকি। আমরা মনে করি, খনিখেকো দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে ভবিষ্যতে খনিজসম্পদ পাওয়া তো দূরের কথা, খোদ খনির মাটি ভক্ষণ করে ফেলতেও পিছপা হবে না দুর্বৃত্তরা।

বিপুল পরিমাণ এ পাথর গায়েবের বিষয়টি উঠে এসেছে এমজিএমসিএলের মহাব্যবস্থাপকের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বোর্ড সভায় বিষয়টি ওঠার পর ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে আরেক প্রতিবেদনে এসব পাথর মাটির নিচে দেবে গেছে দেখানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে একটি পক্ষ।

আরও ভয়াবহ বিষয়, গায়েব হওয়া পাথরের পুরো অর্থ এবং পাথরের পরিমাণ কোম্পানির হিসাব থেকে অবলোপন করার সুপারিশও করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ মাঝে মাঝে অবলোপনের খবর এলেও কোনো কোম্পানির মজুদ পণ্য ও হিসাব অবলোপনের এ আবদার কেবল নজিরবিহীনই নয়, একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এটি খনিজ ও যে কোনো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির দুর্নীতি ‘বৈধ’ করার পন্থা হিসেবে যে ভিত্তি পাবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে সরকারের উচিত হবে যে কোনো মূল্যে পাথর ও কয়লা চুরির রাঘববোয়ালদের শাস্তির মুখোমুখি করা।

এমজিএমসিএলের পাথর উত্তোলন, বিক্রি ও মজুদের মধ্যে গরমিল, অপারেশন বিভাগের শিলা উত্তোলন রেকর্ড ও অ্যাকাউন্ট বুকের রেকর্ডে বড় ধরনের পার্থক্য থাকা, এমনকি কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই কীভাবে পাথর দেবে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে এবং কোম্পানির পক্ষ থেকেও অবলোপনের সুপারিশ করা হচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

আশঙ্কার বিষয়, যে পরিমাণ পাথর চুরির কথা প্রতিবেদনে এসেছে, প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে আরও অনেক বেশি এবং সুষ্ঠু তদন্ত হলে অনিয়মের পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে খনিসংশ্লিষ্টরাই বলছেন। ফলে কোনো ধরনের হেলাফেলা ছাড়া বিষয়টির জোরালো তদন্তের বিকল্প নেই।

অতীব দুঃখের বিষয়, দুর্নীতিবাজদের শাস্তির আওতায় আনার পরিবর্তে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে পুরস্কৃতও করা হচ্ছে। এমজিএমসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম নুরুল আওরঙ্গজেবই তার প্রমাণ।

বড়পুকুরিয়ার ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা চুরিতে অভিযুক্ত এ লোক কীভাবে এমজিএমসিএলে এমডি হয় এবং হজের জন্য ছুটিও পায়! এছাড়া বড়পুকুরিয়ার কয়লা চুরি ও কর্ণফুলীর গ্যাস অনিয়মে জড়িত দু’জন কর্মকর্তাও এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।

যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান থাকত, তাহলে অভিযুক্তরা নতুন করে পাথর চুরির সুযোগ যে পেত না, তা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় উচ্চপর্যায়ের সুষ্ঠু তদন্ত ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তা বাস্তবায়নই খনিজসম্পদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। সূত্র : দৈনিক যুগান্তর