ঐক্যফ্রন্ট কি সরকার বিরোধী জোট হয়ে উঠতে পারবে?

বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট একসাথে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়।

ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের বেশিরভাগ নেতা নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করে। তবে কোন কোন দলের নেতা তাদের দলের নিজস্ব প্রতীক ব্যবহার করেও নির্বাচন করেন।

দলগুলো বলছে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য জন্য তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছে।

কিন্তু নির্বাচনের পরে এই ঐক্যফ্রন্ট কি সরকার বিরোধী একটা বড় জোটের ভূমিকা নিতে পারবে?

নির্বাচনে প্রায় আড়াই মাস আগে, ২০১৮ সালের ১৩ই অক্টোবর এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমমনা রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তৈরি হয়।

ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন গণফোরামের ড. কামাল হোসেন। নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং বড় একটা অংশ ছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট।

এরপরে তারা একত্রে নির্বাচন করেছে। সেই নির্বাচনে সব মিলিয়ে মাত্র সাতটি আসন পেয়েছে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

জাতীয় সংসদে বিএনপির নির্বাচিতরা শপথ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন তাদের নির্বাচিতদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বলে জানালেও, পরে তারাও শপথ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাহলে ঐক্যফ্রন্ট কি সরকার বিরোধী জোট হয়ে উঠতে পারবে?

নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলছিলেন, তারা যে লক্ষ্য এবং দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন তার কোনটাই পূরণ হয়নি। তাই তারা এখনো পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত বলে মনে করছেন।

মি. মান্না বলছিলেন “এখন পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে ঐক্যের সুরটাই আছে। আমরা মনে করছি গণতন্ত্রের এই দাবীগুলোর জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকাই উচিত। কারণ সেগুলোর কোনটাই অর্জিত হয় নি”।

নির্বাচনের সময় ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে।

কিন্তু ২০ দলীয় জোটের কোন কোন দল তাদের নিজের প্রতীক নিয়েও নির্বাচন করে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, ২০ দলীয় জোটের সাথে তারা কখনো ঐক্যবদ্ধ হননি। তাদের সাথে জোট করবেন না বলে তারা জানান।

তিনি বলছেন, “২০ দলীয় জোটের সাথে আমরা কখনই ঐক্যবদ্ধ হয় নি। এটা ঠিক আমরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম কিন্তু তাদের ২০ দলীয় জোট তাদের সাথে বিতর্ক হয়েছে সেটা তাদের ব্যাপার।”

“কিন্তু আমাদের সাথে তাদের জোট বাধা উচিত নয়, সেটা করছি না”।

তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরো বিস্তৃত করার জন্য বিভিন্ন বাম দল এবং ২০ দলের কিছু কিছু নেতার সাথে তারা কথা বলবেন বলে তিনি জানান।

ঐক্যফ্রন্টের এই অবস্থান কিভাবে দেখছে বিএনপি?

দলটির একজন ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলছিলেন, “বিএনপির ২০ দলের সর্বশেষ অবস্থান জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আমাদের উদ্যোগটা গণতান্ত্রিক। সেই গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন হিসাবে অবশ্যই দেখা দেবে। তার উপর ভিত্তি করে কর্মসূচী আসবে।”

“সেই কর্মসূচী পালন করার মধ্যে দিয়েই যারা বন্ধু হিসেবে পাশে আছেন বা দুরে আছেন তারা এক জায়গায় আসতে পারবে বলে আমর দৃঢ় বিশ্বাস।”

এবারের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট ২টি আসনে এবং বিএনপি ৫ টি জয়ী হয়। প্রথমে ঐক্যফ্রন্টের দুইজন শপথ নেয়ার কথা বললেও পরে সেটা তারা বাতিল করে।

এরমধ্যে সংসদে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ২২ আসনে জয়ী হওয়া জাতীয় পার্টি।

এই অবস্থায় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের যদি বিএনপির ২০ দলীয় জোটের প্রতি অস্বস্তি থাকে তাহলে সরকার বিরোধী জোট হিসেবে দাঁড়ানো কতটা সম্ভব?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনীতির বিশ্লেষক রুকসানা কিবরিয়া বলছিলেন যদি ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির নেতৃত্বে জোটগুলোর সরকারি বিরোধী জোট হিসেবে টিকে থাকতে হয় তাহলে তাদের মতবিরোধ গুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে প্রথমে।

তিনি বলছেন, “যদি সরকার বিরোধী একটা জোট হিসেবে টিকে থাকতে চায়, একটা সফল আন্দোলন করতে চায় তাহলে তাদের মধ্যে যে মত বিরোধ আছে সেটা তো মিটিয়ে ফেলতে হবেই।”

“সব দলের মধ্যে মত বিরোধ থাকে এটা বড় কোন সমস্যা না। কিন্তু সেই মতবিরোধ আদৌ মিটাতে পারবে কিনা সেটাই বড় বিষয়”।

রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বিরোধী জোট হিসেবে দাঁড়াতে হলে তাদেরকে স্বার্থের ঊর্ধ্বে যেয়ে চিন্তা করলে সেটা সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ঐক্যফ্রন্টের তিন কর্মসূচী
মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর তিনটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

যার মধ্যে রয়েছে শীঘ্রই জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা করা এবং নির্বাচনী সহিংসতায় যেসব এলাকার নেতা-কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব এলাকা সফর করা।