কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপনে একদিনের আলটিমেটাম

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল থেকে এ এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোটা নিয়ে সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশে বাধা কোথায় আমরা জানি না। সরকার কোটা নিয়ে ভোটের রাজনীতি করতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, কোটা পদ্ধতি সংস্কারে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি না করা পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন চলবে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বুধবার বেলা ১১ টার দিকে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এসময় তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে পজ্ঞাপন না হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল বা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।

তার এ বক্তব্যের পর মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

বুধবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিল সহকারে অন্তত সাত/আটশ শিক্ষার্থী টিএসসির সন্নিকটে রাজু ভাস্কর্যে এসে জড়ো হন। এসময় তারা কোটা বাতিলের পজ্ঞাপন দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে সড়কের দুই ধারে তারা মানববন্ধন করেন। মানবন্ধনের সারি কলাভবনের দক্ষিনের ফটক পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।

প্রসঙ্গত ৮ এপ্রিল থেকে চারদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেন। ৯ এপ্রিল সচিবালয়ে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীরা।

বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা হয়েছে। তাদের বলেছি- আগামী ৭ মের মধ্যে সরকার বিদ্যমান কোটার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। সেই পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে।

এ সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনও ৭ মে পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এ ঘোষণার পর সেদিন রাতে আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। তবে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ১০ এপ্রিল থেকে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তারা কোটা সংস্কারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার দাবি জানান।

পরে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে সব চাকরিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর পর দিন থেকেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রায় মাস পেরোলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।