খাগড়াছড়িতে করোনা ও উপসর্গে ৪ জনের মৃত্যু, বাড়ছে রোগী

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাতে ২৪ঘণ্টার ব্যবধানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিনে উপসর্গ নিয়ে আরও ৩জনের মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার জামতলীর ফিরোজা বেগম(৫৫), সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার ২৭শে জুন করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।

অন্যদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ৩জন রোগী মৃত্যুবরণ করেন। তারা হচ্ছেন আলাই মারমা(৭০),পিতা-আকিও মারমা পানখাইয়া পাড়া, খাগড়াছড়ি সদর। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন ও চিকিৎসারত অবস্থায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে মৃত্যুবরণ করেন এবং মো: আব্দুল মান্নান( ৭০)পিতা-মৃতঃ ইউসুফ মুন্সী। মোহাম্মদপুর, কলেজ গেইট, খাগড়াছড়ি সদর। তিনি গত ৮ই জুলাই শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাত দশটায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। সেও শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় মৃত্যুবরণ করনে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৩জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন।

গত ২৪ঘন্টায় মোট টেস্ট ৮২জন, মোট পজিটিভ ৪৬জন। শনাক্তের হার-৫৬.০৯%। জেলাতে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়েছে চলেছে। সে সাথে পর পর দুই দিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার(৭ই জুলাই) জেলায় করোনায় আক্রান্তের হার ৪৪.৩৩ শতাংশ পৌছেছে। এই নিয়ে চলতি মাসে মোট ২৪৯জনের করোনা শনাক্ত হলো। সব মিলিয়ে শনাক্তের সংখ্যা ১হাজার ৪০৯জন।

এর আগে ৯৭জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৩জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ৪৪.৩৩শতাংশ। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরে-১৭জন, মাটিরাঙ্গায়-১৭জন, মানিকছড়িতে-২জন, পানছড়িতে-২জন এবং দিঘীনালায়-৫জন রয়েছেন। মোট টেস্ট ৮৩৮৪এর মধ্যে মোট পজিটিভ-১৩৬৬জন।

চলতি মাসে মোট টেস্ট ৫৮০জন, মোট পজিটিভ ২০৬জন। সনাক্তের হার ৩৫.৫১%। মোট টেস্ট ৮৪৭৬জন, মোট পজিটিভ ১৩৬৬জন, সনাক্তের হার ১৬.১১%। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩৬জন। তন্মধ্যে পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ২০জন, সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা ১৬জন। শনাক্তের হার ৪৪.৩৩%।

গত মাসে মোট করোনা পরীক্ষা ৬৭৭জন। তার মধ্যে পজিটিভ ২৪৯জন। মোট মৃত্যু ২জন। শনাক্তের হার ১৬.৪৫%। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৩৬জন। অদ্যাবদি মোট করোনা পরীক্ষা ৮৫৭৩ জন। এর মধ্যে সনাক্ত ১৪০৯ জন। জুন মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২শ ৯৬জন।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডাঃ নূপুর কান্তি দাশ বলেন, মৃত ব্যক্তিরা করোনা উপসর্গ নিয়ে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে চিকিৎসা অবস্থায় মারা যায়। তাদের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে বাকী ২জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাড়ছে করোনা রোগীর মৃত্যু হার। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মানুষের উদাসীনতার কারণে পাহাড়ি এই অঞ্চলে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

খাগড়াছড়িতে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী ও শনাক্তের হার। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৩৫রোগী। আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্স। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে খাগড়াছড়িতে চিকিৎসক সংকট থাকায় স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জেল আর জরিমানার সাথে পাল্লা দিয়ে খাগড়াছড়িতে দিন দিন বাড়ছে লকডাউনের বিধি ভঙ্গের প্রবণতা। তারই ধারাবাহিকতায় লকডাউনের সপ্তম দিনেও খাগড়াছড়িতে রাস্তায় আরও বেড়েছে মানুষের পাশাপাশি টমটম, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল। শহরের অলি-গলিতে বেড়েছে নানা কৌশলে দোকানপাট খোলার প্রবনতা।

স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে ২৪ঘণ্টার ব্যবধানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে জেলায় নতুন করে আরও ৪৩জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। বুধবার(০৭ই জুলাই) সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার ভুইয়াপাড়ার নিজ বাড়িতে মারা যান করোনায় আক্রান্ত জামিনা খাতুন (৮০)।
এ নিয়ে জেলায় মোট ১০জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৯জনের। মৃত জামিনা খাতুন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের ভুইয়াপাড়া এলাকার মৃত নুর মিয়া সর্দারের স্ত্রী।

যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্থানীয় কবরস্থানে ওই বৃদ্ধার দাফনের উদ্যোগ নিয়েছে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন।

এর একদিন আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির দীঘিনালা উপজেলাধীর হাসেনসনপুর এলাকার মৃত আ: আজিজ এর স্ত্রী সুর্যবানু বিবি(৮৫)। মঙ্গরবার(৬ই জুলাই) সকাল ৮টার দিকে সে আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে মারা যায়। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ২জুলাই জ্বর, গলাব্যাথা, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়। ৩রা জুলাই তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

পরিস্থিতি বিবেচনায় কোভিড সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা ও জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একযোগে ১৮চিকিৎসককে খাগড়াছড়িতে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার বিকেলে অধিদপ্তরের উপ-সচিব জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত এই আদেশ জারি করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এসব চিকিৎসককে খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়। এদিকে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব চিকিৎসক করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করবে।’ বৃহস্পতিবারের মধ্যে চিকিৎসকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন ১৮চিকিৎসক পাওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। খাগড়াছড়ির ঠিকাদার চন্দন কুমার দে ও সমাজকর্মী লিটন ভট্টাচার্য রানা লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন খাগড়াছড়িতে চিকিৎসক সংকট ছিল। ১৮চিকিৎসককে পদায়ন করায় জেলার মানুষ খুশি।’

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সাত দিনে লকডাউনে বিধি ভঙ্গের অপরাধে খাগড়াছড়িতে ৬৫৪টি মামলায় ৭৯৫জনকে দুই লাখ ১২হাজার ৪শ ২০টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া ৩৬জনকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউনের প্রথম দিন থেকে খাগড়াছড়িতে ১৯জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরা রাস্তায় টহল দিচ্ছে। এ সময় তারা জনগণকে সচেতন করতে লকডাউনের নির্দেশনা ও আইন অমান্যকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করছেন দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও কারাদন্ডসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের কঠোর বিধি নিষেধও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। অনেকে পড়ছেন না মাস্ক। প্রতিদিন ক্রমান্বয়ে জেলায় বাড়ছে করোনায় সংক্রমনের সংখ্যা। সে সাথে মৃত্যুর মিছিলও।
খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডাক্তার নুপুর কান্তি দাশ বলেন, ‘জেলায় চিকিৎসক সংকট ছিল। খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নতুন করে ১৮চিকিৎসককে পদায়ন করায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। আশা করি এতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে। জেলায় গত ২৪ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ২জনের মৃত্যু হয়েছে ও র‌্যাপিড এবং আরটি-পিসিআর টেস্টে ৯২ জনের নমুনায় ৩০জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে ৩৫দশমিক ৮৭শতাংশে দাড়িঁয়েছে করোনা শনাক্তের হার। জেলায় এ পর্যন্ত ৮হাজার ৫শ ৭৩জনের নমুনা পরীক্ষায় এক হাজার ৯জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১০জন।