খালেদার কারাবন্দিতে আটকে ‘সহায়ক সরকার’

একাদশ নির্বাচন সামনে রেখে ঘুরে ফিরে ‘নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা’ আলোচনায় উঠে আসছে। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কেইবা হবেন নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান। তবে এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের বক্তব্য পরিষ্কার। তারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। খবর পরিবর্তন ডটকমের।

অন্যদিকে, বিএনপিও নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ দাবিতে অনড়। কিন্তু দলটি প্রায় দেড় বছরেও তাদের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করতে পারেনি। চলতি বছরের শুরুতে ঘোষণা করার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হলে সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়। কারণ দলটির এখন প্রধান ইস্যু কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সম্প্রতি ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন বিএনপি নেতারা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক সরকারের কথা বলেছেন তারা।

চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচনের কথা রয়েছে। হাতে বেশি সময় না থাকলেও এখনই সহায়ক সরকারের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করতে পারছে না বিএনপি।

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনকাকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা প্রধানমন্ত্রীই ঠিক করবেন। আর নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন।

তিনি বলেন, সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই নির্বাচন হবে।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে পরদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, এই সরকার সেদিন বলল, তারা নাকি জাতীয় পার্টিকে নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবে। এরশাদ সরকার আগে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ছিল আর আওয়ামী লীগ এখন আরেক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এখন মূল কথা হলো, দেশে এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারের অত্যাচারে দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আগেই বলেছি, এরশাদ সরকার আগে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার ছিল আর আওয়ামী লীগ এখন আরেক স্বৈরতান্ত্রিক সরকার। এই দুই স্বৈরাচার মিলে কী ধরনের নির্বাচনাকলীন সরকার গঠন করবে তা দেশবাসী জানে। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। আমরা সময় মতো সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করব।’

তিনি বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক করা আছে (সহায়ক সরকারের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা) তবে কখন ঘোষণা করা হবে তা ঠিক করা হয়নি। নেত্রী মুক্তি পাওয়ার আগে না পরে তা বলতে পারব না।’

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘উপযুক্ত সময়েই আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করব। তবে আমাদের নেত্রী যেহেতু কারাগারে আছেন সেজন্য আমরা নেত্রীর মুক্তির বিষয়টিতে বেশি জোর দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘নেত্রীর মুক্তির আগে সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা হচ্ছে না। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত আছে। আগামী দিনে খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন এ দেশের মানুষ মেনে নিবে না।’

সহায়ক সরকারের রূপরেখা অবশ্যই ঘোষণা করা হবে জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল করিব রিজভী বলেন, ‘আগে আমাদের নেত্রীর মুক্তি, তারপর সময় মতো সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে।’

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে তীব্র বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। শুরুতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার কথা বললেও কিছু দিন হলে সহায়ক সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে দলটি।

২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের সময় ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন’কে সহায়তা করতে সহায়ক সরকারের কথা তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, সুবিধা মতো সময়ে এই সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবে তার দল। কিন্তু সেই ঘোষণার প্রায় দেড় বছর পরও তা আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ওই দিনই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি পুরনো ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।