খুলনায় ছাত্রলীগ ছাত্রদল সংঘর্ষ’ আহত ৮০’ আটক ৩৭

খুলনায় একই দিনে পাশাপাশি স্থানে ছাত্রলীগ ও বিএনপির সমাবেশে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, দুই সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষে বিএনপি অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মহানগরীর পিকচার প্যালেস মোড় এলাকায় এ সংঘাতের সূত্রপাত হয়। পিকচার প্যালেস মোড় থেকে চারদিকে চারটি রাস্তা চলে গেছে। মোড় থেকে পৃথক দুটি রাস্তা ধরে ১০০ মিটার এগোলেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় কার্যালয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ একটি মিছিল বের করে।

ছাত্রলীগের মতোই পূর্ব ঘোষণা দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। খালেদা জিয়াসহ দেশের নাগরিকদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে তারা এই কর্মসূচির ডাক দেয়।

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা পৃথক মিছিল নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময়ই দুপক্ষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ।

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার বলেন, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে মিছিল আকারে আমাদের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বেধে যায়।

তবে খুলনা মহানগর বিএনপি এক খবর বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সমাবেশে আসার জন্য তেরখাদা উপজেলা বিএনপির একটি মিছিল কেসিসি মার্কেট এলাকা থেকে দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসার সময় ছাত্রলীগ হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করে।

এরপরই ডুমুরিয়া থানা বিএনপির একটি মিছিল গোলকমনি পার্ক এলাকা থেকে সমাবেশে আসার পথে পিকচার প্যালেস মোড়ে এসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়। এ সময় যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন কর্মী রক্তাক্ত জখম হন।

রক্তাক্ত কর্মীদের নিয়ে মিছিলকারীরা সমাবেশস্থলে পৌঁছলে উপস্থিত দলীয় কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। শীর্ষ নেতারা তাদেরকে শান্ত করে সমাবেশের কাজ চালিয়ে যান। পরে বিকেল ৫টার দিকে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র, রড, লাঠি, বাঁশ নিয়ে পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে বিএনপি অফিসের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় থানা মোড়ে অবস্থানরত বিএনপি কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান শুরু করে। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে ধেয়ে এসে বিএনপির সমাবেশে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ব্যাপক ভাংচুর শুরু করে। সংঘর্ষের পর বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, হামলা-সংঘর্ষে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন দাবি করেন, সংর্ঘষে তাদের দলের ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

খুলনা সদর থানার ওসি হাসান আল মামুন ব‌লেন, এ ঘটনায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহবায়ক বলেন, সংর্ঘষের পর পুলিশ বিএনপি অফিসের দরোজার তালা ভেঙে একের পর এক নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এ সময় নগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দা রেহানা ঈসা, মহিলা দলের আনজিরা খাতুন, ডুমুরিয়া বিএনপির সরোয়ার হোসেনসহ অন্তত ৩৭ জনকে পুলিশ আটক করে।

ওসি হাসান আল মামুন ব‌লেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ৩৭ জনকে আটক করেছি। ওসি হাসান আল মামুন আরও বলেন, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের কাজে বাধা প্রদানসহ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে পিকচার প্যালেস মোড় থেকে বিএনপি অফিস পর্যন্ত এলাকাজুড়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।

দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টাকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর চরম মারমুখী হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তখন সরকারি অস্ত্র-গুলি ও জান-মাল রক্ষার্থে কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিআর শেল নিক্ষেপ এবং শর্টগানের গুলি ছোড়া হয়। পুলিশ ১২৭ রাউন্ড শর্টগান ও ৪৩ রাউন্ড গ্যাসগান ফায়ার করে। এ ঘটনায় ডিউটিতে নিয়োজিত ১৪ জন পুলিশ আহত হন।

ওসি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত থাকায় খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিনসহ বিএনপির মোট ৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।