খুলনা জুড়ে দানবাক্স, টাকা যায় কোথায়?

খুলনা মহানগরীর রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি, হোটেল, চায়ের দোকান, বাস স্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, আদালত প্রাঙ্গন, হাসপাতালে ঝুলছে বিভিন্ন দানবাক্স। চলার পথে নিরাপদে থাকতে অলি-কামেলদের অদৃশ্য সহায়তা পেতে চায় মানুষ। আবার কোর্ট এলাকায় মানুষ মনে করে- এসব বাক্সে দান করলে মামলার রায় নিজের পক্ষে পেতে সহজ হবে। আর এ কারণেই এসব স্থানকেই বেছে নেয় অর্থ উত্তোলনকারী সিন্ডিকেট।

প্লেন সিটের তৈরি লাল রঙের গোলাকার দানবাক্স। সাদা কালিতে লেখা মির্জাগঞ্জ মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা(র.)মাজারের দান বাক্স। পীরের প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে তারা এসব করছেন। ইসলাম ধর্ম কখনো মাজার সংস্কৃতিকে অনুমোদন করে না, তারপরও ধর্মকে পুঁজি করে আর সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করছে।

সাধারণ মানুষ পুণ্যের আশায় বক্সে অর্থ ভরছেন প্রতিদিন। কেউ জানতে পারছেন না, তালাবদ্ধ এসব বাক্সের টাকা কারা নেয়, এসব বাক্সের টাকা দিয়ে কি করা হয়। অনেকে জানবার চেষ্টা করেও বিফল হচ্ছেন। যেসব স্থানে এসব বাক্স লাগানো হয়েছে তারাও কোন তথ্য জানাতে পারছে না।

মানবাধিকারের অনুসন্ধানী টিম বিষয়টির গভীর যাবার চেষ্টা করলো।কথা হয়,চা বিক্রেতা এক মধ্য বয়সী চাচার সঙ্গে।চাচা,আপনার দোকানে এই যে দানবাক্স এই টাকাগুলো কে বা কারা নেন?আমি চিনি না বাবা।তবে,তিনমাস পরপর এসে খুলে নিয়ে যায়।একটু ভাবুন দেশের সবজায়গাতেই এই বাবার দানবাক্স আছে,তাহলে তিন মাসে দানের হিসেব মোটা অংকে দারিয়ে যায়। এর মধে্ই চোখে পরে এক যুবকের দানকরার দৃশ্য।ভাই,কি কারনে দান করলেন? মসজিদের দানবাক্সে বা ফকিরকে দিতে পারতেন। ভাই,আমি পীরের একজন ভক্ত।ও,তা আপনার পীর কি পারে?পীর মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা(র.) বাবা পারেন না এমন কোন কাজ নেই।

বাক্সর বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলা ইমাম পরিষদের মহাসচিব মাওলানা গোলাম কিবরিয়া বলেন,, নিজের সওয়াবের জন্য মাজার জিয়ারত করলেও দান বাক্সে কোন অবস্থাতেই টাকা পয়সা লেনদেন করা যাবে না। মাজার নিয়ে এধরনের টাকা আদায় সম্পূর্ণ হারাম।

দেশের ধমীয় জ্ঞানে অজ্ঞ লোকগুলোই এইব্যবসার পুজি। যদি কোনো আলেম,অথবা বড় কোনো ধার্মিক ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার মৃত্যুর পরে তার কবর হয়ে যায় মাজার শরীফ। কিছু মানুষ মনে প্রাণে এ বিশ্বাস করে যে কবরে শায়িত আল্লাহর প্রিয় ও মৃত সৎব্যক্তি পৃথিবীর সকল আবেদন নিবেদন শুনতে পায়। সকল প্রকার প্রয়োজন মিটাতে পারে। সকল বিপদ আপদ দূর করতে পারে। তাই জীবনের সমস্যার সমাধানের জন্য মাজারে দান খয়রাত করে থাকে।