গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে একমত ইসি-প্রশাসন-প্রার্থী

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে একমত হয়েছেন সকল প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। ২৬ জুন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার বিকেলে জেলা শহরের বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এমন কথা ব্যক্ত করেন প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের এ সহনশীলতা বজায় থাকলে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে তাতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৮০ দিনেও গাজীপুরে নির্বাচনী কোনো সহিংসতা এমনকি কেউ কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত করেনি। এই যে একের প্রতি অপরের সহনশীল আচরণ এটি নির্বাচনের ক্ষেত্র ও পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি উপাখ্যান। এর প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।

তিনি বলেন, প্রার্থীদের এজেন্টরা নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ফলাফল নিয়ে যেন কেন্দ্র ত্যাগ করেন। এজেন্টরা নির্বাচনের শুরু থেকে নির্বাচনের ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে থাকবেন। কেউ কখনো কেন্দ্রের বাইরে ভোট গণনা করতে পারবেন না। ভোট গণনা হবে কেন্দ্রে, ভোটের ফলাফল দেয়া হবে কেন্দ্রে। এর ব্যতিক্রম হবে না।

সিইসি বলেন, নির্বাচন আপনাদের, ভোট আপনাদের, জনগণ আপনাদের। আপনারা যদি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করেন তখনই আমাদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কারণ আমাদের হাত, আমাদের শক্তি, আমাদের মেধা, আমাদের বুদ্ধি এবং আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস শুধু আপনারাই। আমরা গুটি কয়েক লোক মাত্র। নির্বাচন কমিশনে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার এবং তিনশ’র মতো নির্বাচন কর্মকর্তা। তাদের পক্ষে ১১ লাখ ভোটারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কি সম্ভব, যদি আপনারা ভোটাররা-নাগরিকরা এগিয়ে না আসেন?

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সকল প্রার্থীই বলেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন চান, সকলেই চেয়েছেন সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন চান। সেই দিকে যদি আপনাদের প্রত্যাশা সঠিক থাকে এবং আকাঙ্ক্ষা যদি সঠিক থাকে সে নির্বাচনতো কখনো খারাপ নির্বাচন হতে পারে না। সুষ্ঠু ভোটের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন সিইসি।

তিনি মেয়র প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা একই নগরীর বাসিন্দা, সামাজিকভাবে একে অপরের সঙ্গে বন্ধন আছে, আত্মীয়তা আছে সেটা আপনারা অস্বীকার করতে পারেন না। নির্বাচনের পরে আবার আপনারা একভাবে থাকবেন। যাকে জনগণ ভোট দেবে তিনিই মেয়র হবেন। এ রকম একটা মনোভাব বজায় রেখে আপনারা নির্বাচনের প্রচারণা চালাবেন। নির্বাচনে কাজ করবেন।

কে এম নুরুল হুদা বলেন, পোলিং এজেন্ট একজন প্রার্থীর অত্যন্ত গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে। যদি সেই পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। যদি সেই পোলিং এজেন্ট তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তাই নির্বাচন কমিশন এজেন্টদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। তিনি প্রার্থীদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এজেন্ট দেয়ার আহ্বান জানান।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডলের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী (অব.), নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোয়াজ্জেম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতীতে গাজীপুরে কোনো নির্বাচনে কারচুপি হয়নি। তাই এবার কোনো কারচুপি হবে তা মনে করি না। নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সহনশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনগণ তা মেনে নেবে না। টাকার দাপটের সামনে আমরা হাঁপিয়ে ওঠেছি। নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করা হচ্ছে। অথচ অভিযোগ করে আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। এ ব্যাপারে আমি প্রমাণ দিতে পারি।

নির্বাচন কমিশনারদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করে ইতিহাস সৃষ্টি করুন যাতে জাতি আপনাদের মনে রাখে।