এলএনজি টার্মিনালে যান্ত্রিক ত্রুটি

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে মহেষখালী থেকে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিল্প কারখানা, বিদ্যুেকন্দ্র, সার কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও আবাসিক সংযোগে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। শিল্প কারখানায় উত্পাদন বন্ধ হয়ে যায়।

 

সংশ্লিষ্টরা জানায়, দীর্ঘদিন মেরামত শেষে আসা ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না। আগে থেকে চালু থাকা টার্মিনালটি মেরামতে পাঠানোর জন্য খালি করে ফেলা হয়েছে। যার কারণে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

 

চট্টগ্রাম গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি এলএনজি সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। এখানে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয় না। এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় নেমে আসে। চট্টগ্রামে মহেষখালীতে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। গত কয়েক মাস আগে একটি ভাসমান টার্মিনাল মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওেয়া হয়। তখন থেকে একটি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।

 

কিন্তু এটি থেকে দৈনিক ৩৮০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তার মধ্যে চট্টগ্রামে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হতো। চট্টগ্রামে ৩৪০ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ পেলে শিল্প ও আবাসিক পর্যায়ে চাহিদা মোটামুটি মেটানো যায়। কিন্তু চাহিদার চেয়ে বরাদ্দ কম বিদ্যুত্, সার কারখানা চালু রাখলে আবাসিকে চাপ কমে যায়। ফলে গত কয়েক মাস যাবত্ চট্টগ্রামে আবাসিক খাতে চরম ভোগান্তি নেমে আসে।

গেইট ভালবের কাছে থাকা আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস পেলেও গেইট ভালবের দূরে থাকা আবাসিক গ্রাহকরা গ্যাস নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে। রান্নার চুলা জ্বলছে মিটমিট করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা আগে গ্যাস চলে যায়। বেলার ২টা পর আসে আবার সন্ধ্যা ৬টায় চলে যায় রাত ৯টার পর আসে। এই অচলাবস্থার পর গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে চট্টগ্রামে সব পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।

কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, মেরামত শেষে আসা এলএনজি টার্মিনালটি সংযোগ স্থাপন করতে গেলে যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেয়। তার আগে পূর্বে থেকে চালু থাকা টার্মিনাল খালি করা হয়। পরবর্তীতে এটি মেরামতের জন্য পাঠানো হবে। এতে নতুনটির সমস্যা দেখা দিলে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ভাসমান এলএনজি টার্মিনালগুলো পাঁচ বছর অন্তর অন্তর মেরামত করতে হয়।

চট্টগ্রামে গ্যাস-সংকট অনেক পুরোনো। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাত-আট বছর যাবত্ আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। শিল্প কারখানায় নতুন সংযোগ নামেমাত্র চালু রয়েছে। এখনো প্রায় ১২০টির মতো শিল্পের নতুন সংযোগের আবেদন জমা রয়েছে। অনেকেই ডিমান্ড নোটের টাকা পরিশোধ করেও সংযোগ পাচ্ছে না। চট্টগ্রামে সিই্উএফএল ও কাফকো দুটি সার কারখানা রয়েছে। এই দুটিতে দৈনিক ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকে। গ্যাসনির্ভর চারটি বিদ্যুকেন্দ্রে দৈনিক ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকে।

গ্যাস-সংকটের কারণে বিদ্যুকেন্দ্রের একটি ইউনিটের বেশি চালু রাখা যায় না। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গ্যাস বিরতণ করে থাকে। তারা দাবি করে আসছে চট্টগ্রামে আর অন্তত ৩৪ মিলিয়ন ঘনফুট বরাদ্দ বাড়ানো গেলে চট্টগ্রামের গ্যাস পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলাসহ মন্ত্রণালয়ের সাড়া মিলছে না।

এলএনজি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস বরাদ্দ মিলছে না। কখন এলএনজি সরবরাহ চালু হবে তার জন্য চট্টগ্রামের গ্রাহকদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর পর বাকি গ্যাস চট্টগ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। অথচ এলএনজি বন্ধ হয়ে গেলেও জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। এলএনজি সরবরাহ ৪০০ ঘনফুটে নেমে আসলেও চট্টগ্রামে সরবরাহ কমিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে কেডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবু সাকলায়েন  বলেন, হঠাত্ টার্মিনালের সংযোগ স্থাপনের সময় যান্ত্রিকত্রুটি দেখা দেওয়ায় সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। দ্রুত চালু করার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে গ্রিড থেকে সরবরাহেরও আলোচনা হচ্ছে।’