চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে বালুু খেঁকোদের বাণিজ্যে ডাকাতিয়া নদী ও কৃষি জমির বেহাল দশা!

চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ডাকাতিয়া নদী খনন প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ বালিদস্যু চক্র। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নদীসংশ্লিষ্ট কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ১৫টি দেশীয় প্রযুক্তির ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালি ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করে চলেছে এ চক্র। এ কারণে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদ করায় এলাকার সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে বালিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের মনপুরা, খিলা, কৃষ্ণপুর, ঘুঘুরচপ ও বেরনাইয়া গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর অংশের প্রায় দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ১৫টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। ছয় মাস ধরে এ সিন্ডিকেট নদী থেকে বালি উত্তোলন করে আশপাশের ফসলি জমি ও পুকুর-ডোবা ভরাটসহ নানা ইটভাটায় বালি বিক্রি করছে বলে জানান স্থানীয়রা। এতে কৃষকের ফসলি জমি ভেঙে পড়ছে নদীতে। নদীতীরের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নদীর কোনো কোনো অংশে প্রায় ৪০ ফুট গভীর গর্ত করে বালি তোলা হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও এলাকাবাসী বলছেন, কেউ প্রতিবাদ করলে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয় বালিদস্যু ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা।

বালিমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ বিধি-৪-এর ‘গ’-তে বলা হয়েছে, বালি বা মাটি উত্তোলন বা বিপণনের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হতে পারে। এক্ষেত্রে বালি বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ আইন অমান্য করলে বা অন্য কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অথবা বালি বা মাটি উত্তোলনের জন্য বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বালি বা মাটি উত্তোলন করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ব্যক্তিরা (এক্সিকিউটিভ বডি) বা তাদের সহায়তাকারী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড, সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এসব আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ না থাকায় বালিদস্যু সিন্ডিকেট নির্বিঘেœ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এখানকার হাজার কৃষকের ক্ষতি বিবেচনা না করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যেভাবে প্রভাবশালীরা নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলছেন তাতে কয়েক দিনের মধ্যে নদীর পাড়ের ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমরা এর বিরুদ্ধে কথা বললে তারা মামলা-হামলার হুমকি দেয়।

এদিকে ডাকাতিয়ায় খননকাজের ঠিকাদার মৌনতা কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাকছুদুর রহমান বলেন, শাহরাস্তি এলাকায় নদী খনন কাজের জন্য আমার সাতটি কাটার সাকশন মেশিন রয়েছে। মনপুরা, কৃষ্ণপুর, ঘুঘুরচপ ও বেরনাইয়া এলাকায় নদীর অংশে আমি কাজ করিনি। সেখানে আমার কোনো ড্রেজার নেই। এছাড়া বাকি যেসব ড্রেজার নদী থেকে বালি উত্তোলন করে বাণিজ্য করছে, সেগুলো আমার নয়। আমার নাম দিয়ে কেউ হয়তো বাণিজ্য করে যাচ্ছে, তা আমার জানা নেই। আমি অত্রাঞ্চলের মানুষের মঙ্গল চাই। সেভাবেই আমি বিআইডব্লিউটিএর নিয়ম মেনে কাজ করছি। ওইসব মেশিনের মালিকের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ওই মেশিনের মালিকরা নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছে। এতে যদি কোনো কৃষকের ফসলি জমি নদীতে ভেঙে পড়ে, সে দায় আমার নয়।

অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, এ নদী থেকে বালি উত্তোলন করে ফসলি জমি, পুকুর ও জলাশয় ভরাট করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মূল হোতা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। তার সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক বলয়ের নেতা-কর্মীরা। আমাদের ফসলের জমি নদীতে ভেঙে পড়ছে, যা দেখার মতো কেউ নেই। সবাই বলছে, অভিযোগ দেন। অভিযোগ করব কার বিরুদ্ধে?
এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল বলেন, চলমান ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের খিলা, ঘুঘুরচপ, মনপুরা ও বেরনাইয়া অংশে এখনও আমরা কাজ শুরু করিনি। মৌনতা কনস্ট্রাকশন নামে কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কোনো চুক্তি হয়নি। হয়তো বিআইডব্লিউটিএর কাজ করছেন সেই ঠিকাদার।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপপরিচালকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। তাছাড়া এ এলাকার সংসদ সদস্য কোনো অপকর্মকে প্রশ্রয় দেন না। কৃষকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেবো।