নাটকীয়তায় পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে মমতা হারলেন শুভেন্দুর কাছে

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে আলোচিত নন্দীগ্রাম আসনে ভোটের ফল নিয়ে কয়েক ঘণ্টার চরম নাটকীয়তা শেষে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।

খবর আনন্দবাজারের।

অথচ রোববার সন্ধ্যায় প্রথম খবর এসেছিল এই আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে এক হাজার ২০১ ভোটে জিতেছেন তৃণমূল নেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ওই খবর প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ফোনে নন্দীগ্রামে নিজেকে বিজয়ী দাবি করেন এক সময় মমতার ‘লেফটেনেন্ট’ হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু। যিনি তৃণমূল ছেড়ে এবারই প্রথম পদ্মফুল (বিজেপি) নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন।

দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীর জয় দাবির প্রেক্ষিতে সন্ধ্যা থেকেই নন্দীগ্রাম আসনের ফল নিয়ে নাটকীয়তা শুরু হয়।

একদিকে নির্বাচন কমিশন ভোট পুনগণনা করবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে মমতা সাফ জানিয়ে দেন, নন্দীগ্রামের মানুষ যে রায়ই দিক তিনি তা মেনে নেবেন। একই সঙ্গে তিনি নন্দীগ্রামে ‘ভোট লুটের’ অভিযোগ তুলে আদালতে যাওয়ার হুমকি দেন।

এ নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েনের পর স্থানীয় সময় রাত ৮টার পরে নির্বাচন কমিশন নন্দীগ্রামে ভোট পুনগণনা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে ওই আসনে শুভেন্দুকে বিজয়ী ঘোষণা করেন বলে জানায় কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার।

ওই সময়ে শুভেন্দু এক টুইটে ভোটের চূড়ান্ত রাউন্ডের গণনার ‘টেবুলেশন শিট’ পোস্ট করে নিজের বিজয় দাবি করেন।

My sincere thanks to the great People of Nandigram for their love, trust, blessings, and support, and for choosing me as their representative and the MLA from #Nandigram. It is my never-ending commitment to be of service to them and working for their welfare. I am truly grateful! pic.twitter.com/oQyeYswDa8

— Suvendu Adhikari • শুভেন্দু অধিকারী (@SuvenduWB) May 2, 2021

ওই ‘শিট’ অনুযায়ী মমতার থেকে তিনি এক হাজার ৭৩৬ ভোট বেশি পেয়েছেন।

নন্দীগ্রামে ১ লাখ ৯ হাজার ৬৭৩ ভোট পেয়েছেন শুভেন্দু।
মমতা পেয়েছেন ১ লাখ ৭ হাজার ৯৩৭ ভোট।

‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড’ নন্দীগ্রামের ভোটের ফল নিয়ে অবশ্য দিনভরই উত্তেজনা ছিল। রোববার সকাল থেকে ষষ্ঠ রাউন্ডের ভোট গণনা শেষে শুভেন্দু অধিকারী ৭ হাজার ২৬২ ভোটে মমতার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মমতা ব্যবধান কমাতে শুরু করেন।

এ আসনে মোট ১৭ রাউন্ডে ভোট গণনা শেষে প্রথম মমতা জিতেছেন বলে খবর বের হয়।

২০১৬ সালে মমতার দল তৃণমূলের হয়ে নন্দীগ্রাম আসনে জিতেছিলেন শুভেন্দু। গতবছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।

মমতার সরকারে পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি লোকসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করা শুভেন্দু ১৯৯৫ সালে কংগ্রেসের হয়ে কাউন্সিলর নির্বাচনে জেতেন। নন্দীগ্রামে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রভাব সুবিদিত।

এবার ভোটের আগে মমতাকে হারানোর ‘চ্যালেঞ্জ’ দিয়েছিলেন শুভেন্দু। তৃণমূলনেত্রী কলকাতায় নিজের আসন ছেড়ে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণও করেন।

মমতা নন্দীগ্রাম আসনে হারলেও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস যে টানা তৃতীয়বারের মত পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে তা এখন নিশ্চিত। যদিও আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা হয়নি।

এরই মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে মমতাকে পশ্চিমবঙ্গে ‘তার দলের জয়ে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন।

দল জিতলেও হেরে গেছেন মমতা। তিনি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম আসনেই প্রার্থী হয়েছিলেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তিনি এবার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা।

ভারতীয় সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশটির কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে তাকে ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স হতে হবে ২৫ বা তার বেশি।
তাকে রাজ্যের বিধানসভার সদস্য হতে হবে।
আর বিধানসভার সদস্য না হয়েও কেউ যদি মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন, তাকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হবে।

কেউ হেরে যাওয়ার পরও তার দল যদি সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় এবং দলের নির্বাচিত সদস্যরা যদি তাকে নেতা নির্বাচিত করেন, তাহলে তার মুখ্যমন্ত্রী হতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

তবে ভোটে না জিতেও মুখ্যমন্ত্রী হলে তাকে ওই পদে বসার ১৮০ দিনের মধ্যে কোনো একটি আসন থেকে জিতে আসতে হবে। তা না পারলে ছেড়ে দিতে হবে পদ।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে দুটির ভোটগ্রহণ প্রার্থীর মৃত্যুতে স্থগিত রয়েছে। ফলে এর একটি আসনে ছয় মাসের মধ্যে জিতে এলেই মমতার মুশকিল আসান হতে পারে।