চালু হচ্ছে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’

প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করা পাঁচজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।তবে পদকের খসড়া নীতিমালা-২০১৮-এর খসড়া মন্ত্রীসভা অনুমোদন দিলেও এখন পর্যন্ত পদক দিতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এটি জাতীয় পদকে অর্ন্তভূক্ত করতে সম্প্রতি সভা আহবান করা হয়েছে। আগামি ২৩ নভেম্বর সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পুরষ্কার সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির আহবায়ক আ.ক.ম মোজাম্মেল হক।

এরপর আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসে প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয়দানসহ তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তার এ প্রাপ্তি দেশের জনগণ ও জনসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সমাজকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ চালু করা হয়। ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক নীতিমালা ২০১৮’ মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পরের বছর ৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে নীতিমালার গেজেট প্রকাশিত হয়। অনুমোদিত নীতিমালা অনুযায়ী মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক জাতীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে।

নীতিমালায় ব্যক্তি, বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দপ্তর/ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান হতে ৫টি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকার জন্য ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ প্রদানের উল্লেখ রয়েছে।

এটি জাতীয় পদকে অর্ন্তভূক্ত করতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে বলা হয়, পদকের ডিজাইন, পদকের বর্ণনা/পরিমাপ জাতীয় পদকের আদলে তৈরি করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী ডিজাইন আহবান করে তা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১৪ নভেম্বর ২০১৯ তারিখের স্মারকমূলে জারিকৃত জাতীয় পুরস্কার/পাদক সংক্রান্ত নির্দেশাবলী ২০১৯ এ ‘মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক’ অর্ন্তভুক্ত করা প্রয়োজন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কর্মসম্পাদন ব্যবস্থাপনা) খাদিজা নাজনীন বলেন, নতুন একটি পদক চালু হওয়ায় বেশ কিছু কাজ আমাদের করতে হয়েছে। বিষয়টি এগিয়ে নিতে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ কাজ করছে। আশা করছি ৩১ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসে প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদক দেওয়া হবে।

পদক পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১৮ ক্যারেটের ২৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদকের রেপ্লিকা পদক ও দুই লাখ টাকার চেক এবং সম্মাননা দেওয়া হবে। বাছাই কমিটির মাধ্যমে পদকপ্রাপ্তদের নির্বাচন করা হবে। এ জন্য জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি এবং জাতীয় পর্যায়ে মন্ত্রিসভার সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি থাকবে। এই পদক স্বাধীনতা ও একুশে পদকের সমমানের হবে।

পদকের ক্ষেত্রগুলো হলো- ‘বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে অবদান; প্রান্তিক, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, আত্মনির্ভরশীলকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি; প্রতিবন্ধী ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ, জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ইনক্লুসিভ শিক্ষা বাস্তবায়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান; সুবিধাবঞ্চিত, আইনের সংস্পর্শে আসা, আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু, কারামুক্ত কয়েদি, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের কল্যাণ, উন্নয়ন, পুনঃএকত্রীকরণ এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমন কোনো কর্ম যা সমাজের মানুষের মেধা ও মননের বিকাশ, জীবনমান ও পরিবেশের উন্নয়ন, সমাজবদ্ধ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সর্বোপরি মানবকল্যাণ ও মানবতাবোধে সমাজ বা রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার কার্যক্রম।’