যুক্তরাজ্যের পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাদ পড়ল চীন

চীনে উদ্ভূত কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে বিবিসি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার

চীনকে তার নতুন সাইজওয়েল সি পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ফরাসি অংশীদার ইডিএফ-এর যৌথ অংশীদারিত্বে এর অবশিষ্টাংশ নির্মিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক যুক্তরাষ্ট-চীন সম্পর্কের সোনালি যুগের অবসান ঘটেছে ঘোষণা দেওয়ার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সুনাক চীনকে যুক্তরাজ্যের জন্য একটি পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।

চীনে উদ্ভূত কোভিড বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভে বিবিসি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। কথিত হামলার বিষয়ে কূটনৈতিক ঝড়ের মধ্যেও মঙ্গলবারে এই সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ করা হয়।

সুনাকের কনজারভেটিভ সরকার বিতর্কিত সাইজওয়েল বিদ্যুতকেন্দ্রের ২০শতাংশ চীনের পারমাণবিক সংস্থা সিজিএন থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তারা ইডিএফ-এর সঙ্গে একটি যৌথ উদ্যোগ গঠন করেছে।

যুক্তরাজ্য এই প্রকল্পে ৮৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। ২০৩৫ সাল থেকে এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইডিএফ যুক্তরাজ্যের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি সংকটের মধ্যেও সম্পূর্ণরূপে জাতীয়করণের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মঙ্গলবার নিশ্চিত করা হয় যে এটি এখনও দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের হিঙ্কলে পয়েন্ট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য সিজিএনের সঙ্গে কাজ করছে। কিন্তু সুনাকের এই ঘোষণা চীনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে।

ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস, এনার্জি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজি (বিইআইএস) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সাইজওয়েল সি প্রকল্পে অংশীদারিত্ব যুক্তরাজ্যের শক্তি সার্বভৌমত্বের নতুন নীলনকশার কেন্দ্রে অবস্থিত।

যুক্তরাজ্য বলেছে, সাইজওয়েল জীবাশ্ম জ্বালানির চেয়ে অধিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং স্থানীয় এলাকা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
গ্রিনপিস ইউকে পলিসি ডিরেক্টর ডগ পার অবশ্য সুনাকের এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি একাডেমিক প্রতিষ্ঠান দেখিয়েছে যে আমাদের ১০০ শতাংশ নবায়নযোগ্য ব্যবস্থা থাকলে এটি পারমাণবিক বা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে তৈরি বিদ্যুতকেন্দ্রের তুলনায় সস্তা হবে।

স্থানীয় ক্যাম্পেইন গ্রুপ স্টপ সাইজওয়েল সি বলেছে, প্রকল্পটি বিদ্যুৎবিল কমাতে পারবে না বা যুক্তরাজ্যকে বিদ্যুতশক্তির স্বাধীনতাও দিতে পারবে না। এতে শুধু বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে।

ইডিএফ পারমাণবিক সংস্থার প্রধান নির্বাহী সিমোন রসি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সাইজওয়েলের জন্য সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারের সমর্থন অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি পারমাণবিক শিল্পে এবং ফরাসি পারমাণবিক শিল্পে গোপনীয়তার লক্ষণ।’

ব্যবসা ও জ্বালানি সচিব গ্রান্ট শ্যাপস বলেছেন, সাইজওয়েল ব্রিটেনকে বিদ্যুতের বৃহত্তর স্বাধীনতার দিকে এবং অস্থির বৈশ্বিক বাজারের ওপর বিদ্যুতের নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনবে।
যুক্তরাজ্যের আটটি এলাকায় ১৫টি পারমাণবিক চুল্লি রয়েছে তবে অনেকগুলোর মেয়াদ শেষের পথে। সাইজওয়েল দুটি পাওয়ার প্ল্যান্ট নিয়ে গঠিত। সাইজওয়েল এ ১৯৬০ সালে খোলা হয় এবং২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সাইজওয়েল বি ১৯৯৫ সালে খোলা হয় এবং এটি এখনও চালু রয়েছে ।