চুয়াড‌াঙ্গায় নারী দেহ ব‌্যবসার আস্তানায় পু‌লি‌শের হানা: ৬ নারীসহ ৫ খ‌রিদ্দার আটক

মাদ‌কের পাশাপাশি পুরুষ‌কে ধ্বংস কর‌তে প‌া‌রে একমাত্র নারীর দেহ ব‌্যবসা। অার সে ব‌্যবসা প‌রিচালনা ক‌রে চুয়াডাঙ্গা জেলার স্থানীয় যুবক ও তরুণ উঠ‌তি বয়সী‌দেরকে ধ্বংস ক‌রে ফেল‌ছিল শহ‌রের হকপাড়ার বা‌সিন্দা আলো‌চিত নারী দেহব‌্যবসায়ীর মূল হোতা সে‌লিনা খাতুন ও দৌলতদিয়ার বঙ্গজপাড়‌ার আলোচিত নারী রা‌শিয়া খাতুুন।

ত‌বে এ দেহ ব‌্যবসার সা‌থে জ‌ড়িত র‌য়ে‌ছে বি‌ভিন্ন জেলা থে‌কে আসা আরও ৪ নারী। দীর্ঘদিন ধ‌রে তারা শহ‌রের ও‌লিগ‌লিসহ ওই বাসায় অ‌নৈ‌তিক কার্যক্রম চা‌লি‌য়ে আস‌ছিল তারা। তাদের সা‌থে আরও ৪ নারী মি‌লে গ‌ড়ে তু‌লে‌ছিল মি‌নি প‌তিতালয়। ফ‌লে স্থানীয়সহ জেলার বি‌‌ভিন্ন এলাকা ছাড়াও বাইরের জেলা থে‌কেও মধু খে‌তে পুরুষরা আস‌তো ওইসব প‌তিতাল‌য়ে। এভা‌বেই সমা‌জের যুবক ও তরুণ‌দের‌কে ন‌ষ্ট ক‌রে ফেলে আসছিল তারা।

এ অসামা‌জিক কার্যকলা‌পের প্রতিবাদ ক‌রেও বন্ধ কর‌তে পা‌রে‌নি স্থানীয়রা। অব‌শে‌ষে স্থানীয় স‌চেতন মহ‌লের অ‌ভি‌যোগ পু‌লি‌শের কা‌ছে গে‌লে অ‌ভিযা‌নে না‌মে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পু‌লিশের একদল চৌকশ সদস‌্য।

দেহ ব্যবসায়ের অভিযোগে (১৭ জানুয়ারী) মঙ্গলবার সন্ধ‌্যার দি‌কে চুয়াডাঙ্গা শহরের আবাসিক এলাকার বাসা বাড়িতে অ‌ভিযান চা‌লি‌য়ে ৬ প‌তিতা নারী খ‌রিদ্দার আরও ৫ পুরুষসহ মোট ১১ জন‌কে আটক করে পুলিশ। শহরের হক পাড়া ও বঙ্গজপাড়া এলাকায় এ অভিযান চা‌লি‌য়ে তা‌দের‌কে আটক কর‌া হয়।

পরে ভ্রাম‌্যমাণ আদালত প‌রিচালনা ক‌রে আটককৃত নারী ও পুরুষদের‌কে তিন মাস করে কারাদণ্ড দেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূইয়া।

এদি‌কে, এ অসামা‌জিক কার্যকলা‌পের অপরা‌ধে তা‌দের‌কে আটকের ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পু‌লিশ‌কে সাধুবাদ জানি‌য়ে‌ছে স্থানীয়রা। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, পৌর শহরের হকপাড়ার মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে ইকবাল (৪৮) এবং প‌তিতা নারী তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৪৫), সদর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামের আব্দুল হান্নানের মেয়ে ববিতা খাতুন (২২), নড়াইলের লোহাগড়া থানার বড়দিয়া গ্রামের জাকির হোসেনের মেয়ে শাকিলা খাতুন (২০), চুয়াডাঙ্গা শহরের বঙ্গজপাড়ার রবিউল ইসলামের স্ত্রী রাশিয়া খাতুন ওরফে রাশি (৪০), দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের নাজমুল ইসলামের স্ত্রী তাছলিমা খাতুন (২০), মেহেরপুরের গাংনী থানার হাড়িয়ারঘোপ গ্রামের শামীমুজ্জামানের স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৪৫), মেহেরপুরের বারাদি গহরপুরের সুকুমার দাসের ছেলে রতন দাস (২২), একই গ্রামের ঠান্ডুর ছেলে শিপন আলী (২৩), মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে সোহাগ হোসেন (২৫) ও আনারুল ইসলামের ছেলে শামীম (২৫)।

অভিযান সূ‌ত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার শহরের আবাসিক এলাকার অলি-গলির বাসাবাড়িতে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে নামে সদর থানা পুলিশ ও সদর উপজেলা প্রশাসন। একদিনেই আক‌স্মিকভা‌বে শহরের হক পাড়ার চিহ্নিত আলোচিত নারী সেলিনা খাতুনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেসময় প‌তিতাবৃ‌ত্তি সেলিনা খাতুনসহ তার স্বামী ইকবালকে আটক করা হয়। একইসাথে দেহ ব্যবসায়ের অভিযোগে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয় ববিতা খাতুন ও শাকিলা খাতুনকে।

দীর্ঘদিন ধরেই এমন অনৈতিক কাজ চলে আস‌ছিল ব‌লে অভিযোগ পায় পুলিশ। পরপরই অভিযান চালানো হয় শহরতলীর বঙ্গজপাড়ার আরেক পতিতা প‌রিচালনাক‌ারী আলোচিত নারী রাশিয়া খাতুন ওরফে রাশির বাড়িতে। সেখ‌া‌নে তিন প‌তিতা নারী ও ৪ খ‌রিদ্দারসহ আটক করা হয় মোট ৭ জনকে। অবশ‌্য প‌তিতাল‌য়ের বিষয়টি অনেকটা জানাজা‌নির মধ‌্যদি‌য়েই গোপ‌নে চ‌লে আস‌ছিল। এসব অ‌নৈ‌তিক কর্মকাণ্ড চালি‌য়ে তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংস ক‌রে ফেল‌ছিল তারা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী খাদিমপুর এলাকা থেকে উঠে এসে বসতি‌ভিটায় নারীর দেহ ব্যবসায়ের সম্রাজ্য গ‌ড়ে তো‌লে রাশিয়া খাতুন। দোতলা বাড়ি বানিয়ে সেখানেই বানানো হয়েছে মিনি পতিতালয়। স্থানীয় লোকজন এর প্রতিবাদ করলে উল্টো হুমকি ধামকি দেয়া হতো তা‌দের‌কে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, শহরের চিহ্নিত দুই নারীর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ করার অভিযোগে প‌তিতা নারী ও পুরুষসহ মোট ১১ জনকে আটক করা হয়। শহর শান্তিতে ও নিরাপদ রাখতে পুলিশের এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে ব‌লেও জানান তি‌নি। ত‌বে এজন্য সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম ভূইয়া জানান, অভিযোগের দায় স্বীকার করার পর দণ্ডবিধি ২৯১ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের সবাইকে তিনমাস করে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হ‌য়ে‌ছে।