চেয়ার ছেড়ে রাজনীতি করুন : বিচারকদের উদ্দেশে বিএনপি নেতা আমীর খসরু

বিচারকদের চেয়ার ছেড়ে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে একটি অবৈধ সরকার অবৈধভাবে দেশ পরিচালনা করছে। আজ এই প্রেক্ষাপটে ভোটচুরির প্রকল্প, এই রেজিমের মধ্যে কারা আছে? এর মধ্যে আছে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও লুটেরা ব্যবসায়ী।’

ভোটচুরির প্রকল্পে ‘বিচারক লীগ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আর আছে আওয়ামী জাতীয় বিচারক লীগ। এটা নতুন এডিশন। যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে, এর মধ্যে বিচারক লীগ নতুন সংযোজন। এই বিচারক লীগের ভূমিকা কি? এই যে প্রেক্ষাপটটা সৃষ্টি হয়েছে, ওনারা আগে প্রকাশ না করে কাজ করেছেন, এখন নিজেদের প্রকাশ করছেন।’

‘বাংলাদেশের যেসব গোষ্ঠী একটি ভোট চুরির প্রকল্পের মধ্যে জনগণের সাংবাধিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে টিকে আছে তার মধ্যে এই বিচারক লীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোর্টগুলোতে এখন প্রতিদিন বাংলাদেশের নাগরিকরা সুরক্ষা পাওয়ার বদলে অন্যায় ও অবিচারের শিকার হচ্ছে। ভোটচুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতা কর্মীদের প্রতিদিন কোর্টে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে।’

‘বিচারকের মূল ভূমিকা ও তাদের শপথ হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান এবং বিচারের সুরক্ষা করবে। ওনারা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবেন। উনারা কোনো রাজনীতিতে অংশ নেবেন না। এটা কোড অব কনডাক্ট বিশ্বজুড়ে। রাজনীতিতে ভাবাবেগে প্রভাবিত হয়ে কিংবা নিজের মতামতে প্রভাবিত হয়ে ওনারা বিচার করতে পারবেন না। কিন্তু এটা তো বাংলাদেশে নেই।’

কোন দল ক্ষমতায় আসবে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব বিচারকদের দেওয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধান বিচারককে দায়িত্ব দিয়েছে সংবিধান রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে ভোটাধিকার হচ্ছে অন্যতম অধিকার। ভোট হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহক। ভোট ছাড়া কোনো গণতন্ত্র হতে পারে না। ভোটের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, সাংবিধানিক অধিকার সে ভোটের মধ্যে প্রকাশ করে।’

‘এক বিচারক বলেছেন, বিচারকরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। অথচ ওনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আইন রক্ষা করার। কোন দল ক্ষমতায় আসবে এটা কি ওনাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? ওনাদের কথাবার্তায় কি প্রকাশ পায় না ওনারা কি চাচ্ছেন বাংলাদেশে। বিচারকরা এমন কি উপদেশও দিতে পারেন? এমন উপদেশ দিতে পারে না যেটা ওনার নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে পারে। এটা তিনি দিতে পারেন না।’

আমীর খসরু বলেন, ‘বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আপনার ভোট কেড়ে নিচ্ছে। নেতা শূন্য, কর্মী শূন্য— একটা নির্বাচন তাদের মাধ্যমে করাতে চাচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ৪০ লাখ নামের সঙ্গে আরও কয়েক লাখ যুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন এখন হেয়ারিং হচ্ছে।’

‘আবার সেই নির্দেশ আসছে পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে চিঠিগুলো সহজে গণমাধ্যেমগুলোতে দেখা যাচ্ছে। তারা বিচারবিভাগকে কি নির্দেশ দিচ্ছে, কর্মকর্তাদের কি নির্দেশ দিচ্ছে। প্রতিদিন যেতে হবে, সাক্ষী দিতে হবে। যে পুলিশ অফিসার সাক্ষী দেবে না তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হবে।’

বিচারকরা ভোটচুরির প্রকল্পের একটি অংশ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিচারকদের বলা হয়েছে দ্রুত বিচার শেষ করে দলকে নেতাশূন্য, কর্মীশূন্য করে এমন নির্বাচনী পরিবেশ তৈরী করতে, যাতে তারা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে। এই সমস্ত বিচারক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও লুটেরা ব্যবসায়ী, এদের সবার কাজ কিন্তু একটাই।’

‘তাদের দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে বাইরে রেখে আবার ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করা। এই সমস্ত বিচারক যার এসব কাজ করছে তারাও কিন্তু ভোট চুরি প্রকল্পের একট অংশ। যে সমস্ত বিচারক ভোট চুরির প্রকল্পের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তারা একটি দলকে ক্ষমতায় নেওয়া জন্য চেয়ার ছেড়ে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হয়ে যান। কারও কোনো আপত্তি থাকবে না।’

ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট চট্টগ্রামের সভাপতি আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে ও প্রধান সমন্বয়কারী জহুরুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন নবগঠিত সংগঠনের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদিন, সহ-আহ্বায়ক সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ন মহাসচিব মাহাবুদ্দিন খোকন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম বদরুল আনোয়ার এবং ইসলামিক ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার।