জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, যা বলছে যশোর পুলিশ

এবার পুলিশের বিরুদ্ধে যশোরে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয় ও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের টহল দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের অপসারণ দাবিতে শুক্রবার মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেন পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে পুলিশের অবস্থান এবং শহরব্যাপী ব্যাপক পুলিশি টহলের কারণে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারেননি আন্দোলনকারীরা।

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, ডিবি পুলিশ ও কোতয়ালি থানা পুলিশের একাধিক টিম তারসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। অনেকের কার্যালয়েও গেছে পুলিশ।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন।

সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে যায় পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের নেতৃত্বে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইনের অপসারণের দাবি জানানোর পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। গত রাতে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে না আসার জন্য হুমকি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে পুলিশ তার বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম যশোর উপ-শহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিয়েছে।

জানতে চাইলে লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, পুলিশ আমাদের বাড়ি এসে নানা ধরনের কথা বলছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে যা অত্যন্ত অসম্মানের।
নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ বলেন, পুলিশ জনপ্রতিনিধিদের সম্মান নিয়ে খেলছে। বাড়িতে এসে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে। আমাদের কাছে খবর আছে, জনপ্রতিনিধিদের সম্মানহানির জন্য আটক করে কাউকে মাদক, কাউকে অস্ত্র আবার কাউকে গোল্ড দিয়ে চালান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে পুলিশ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের যে নিয়মিত অভিযান, সেটি অব্যাহত আছে। কোনো জনপ্রতিনিধির বাড়ি যায়নি পুলিশ।

জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলনসহ চার জনকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার প্রতিবাদে যশোর পৌরসভা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা উল্লিখিত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন থেকে জনপ্রতিনিধিরা একই দাবিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন, ১৭ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, ১৮ ফেব্রুয়ারি দড়াটানায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরপরও তাদের অপসারণ করা না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।