জাবি উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর, ৭ শিক্ষক আহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বাসভবনের প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবি জানান। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনের জানালার কাচ, সিসি ক্যামেরা ও ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়। এতে সাত শিক্ষক আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর এসব ঘটনা ঘটে।

শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল ও ধাক্কাধাক্কিতে আহত শিক্ষকদের মধ্যে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দীনের নাম পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মেহেদী ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁরা বাসভবনের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিতে গেলে অন্তত সাতজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীরা সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এরপর ফটকের তালা ভেঙে তাঁরা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। শিক্ষকরা বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। ধাক্কাধাক্কি ও ইটপাটকেলের আঘাতে সাত শিক্ষক আহন হন। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অন্তত পাঁচ প্লাটুন পুলিশ অবস্থান করছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা বাসভবনের ভেতরে রয়েছেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল শুক্রবার ভোরে সাভার থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনাগ্রহের কারণেই ক্যাম্পাসে তাঁদের জানাজার ব্যবস্থা করা হয়নি।

এর প্রতিবাদে আজ দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগের নেতারা কয়েক দফা কথা বলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরাতে পারেননি। সড়ক অবরোধ করে নানা ধরনের স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ জানান শিক্ষার্থীরা।

দুপুরে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি গেটে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো, জয় বাংলা (প্রান্তিক) গেটে সাতদিনের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু, আজকের মধ্যেই পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, গতিসীমা নির্দিষ্ট করা, নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মীয়দের যোগ্যতা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া, নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ নানা দাবি তুলে ধরেন। উপাচার্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে লিখিত দাবির কাগজে সই করেন।

কিন্তু এরপরও রাস্তা থেকে সরে যাননি শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানান, তাঁদের দাবির আগেও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় এ রকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে তার বাস্তবায়ন হয়নি।

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু হলেই কেবল রাস্তা ছাড়বেন বলে জানান তাঁরা। এ সময় ‘আশ্বাসে কাজ হবে না, রাস্তা ছেড়ে এক বিন্দু নড়ব না’ বলে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীরা ব্যস্ততম ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে সরে না যাওয়ায় বিশাল যানজট সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিকেলে পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন ও জাগো নিউজের জাবি প্রতিনিধি হাফিজুর রহমান ও অন্তত আট শিক্ষার্থী আহত হন।

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করেন। এরপর মিছিল নিয়ে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে মিছিল শুরু করেন। পরে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন।