জিরো পয়েন্টে মিয়ানমারের গুলি, রোহিঙ্গাদের জবাব

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ঢুকে হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। পরে রোহিঙ্গারা জবাব দিলে পিছু হটে সেনা সদস্যরা। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের সীমান্তবাহিনী বিজিবির সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে জিরো লাইনে আসতে চাইলে রোহিঙ্গারা বাধা দেন। এ সময় তারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেন। এতে আতঙ্কিত বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার জিরো লাইন ছেড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়দের বসতবাড়িতেও আশ্রয় নেন অনেকে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ ও সদস্য আবদুর রহিম বলেন, ‘মিয়ানমার সেনা বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলে আসেন। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।’

তারা আরও বলেন, ‘রাত হওয়ায় নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদের আমাদের এলাকার বাড়িঘরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ভোরে তাদের জিরো পয়েন্টে যেতে সহায়তা করা হবে।’

এরআগে তুমব্রু সীমান্তে হঠাৎ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সৈন্য সংখ্যা বাড়ায়। অস্ত্র নিয়ে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়েছে তারা।

ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি হালকা অস্ত্রও তাক করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

রোহিঙ্গারা জানান, সকাল থেকে ৭টি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়। সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া বরাবর ব্যাংকারগুলোতেও অবস্থান নিয়েছে তা। তাদের সঙ্গে বিজিপির সদস্যরাও পাহাড়া দিচ্ছে।

জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ জানান, সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছে।

এদিকে সকাল থেকে ১১ বার মাইকিং করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারা জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে।

নো ম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা মো. ওবায়েদ জানিয়েছেন, সন্ধ্যার পরে থেকে মিয়ানমারের সদস্যরা কাঁটাতারের বেষ্টনী পার হওয়ার চেষ্টা করে। রাত আটটার দিকে তারা কাঁটাতারের পাশে মই দিয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডে ঢুকার চেষ্টা করে। একই সময় মিয়ানমারের ভেতর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়।

তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের সেনারা জোর করে নো ম্যান্স ল্যান্ডে ঢুকতে চাইলে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা প্রতিরোধ করেন। কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের প্রতিরোধের মুখে মিয়ানমার সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।

তবে এ সময় মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এরপর মিয়ানমারের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ পরপর থেমে থেমে গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক মনজুরুল আহসান খান জানান, নো ম্যান্স ল্যান্ডের ঘটনার পর থেকে সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও তিনি জানান।