ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় ‘হারপিক গুজব’, কান দিলে উল্টো ক্ষতি

দেশে ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে তা প্রতিরোধে একটি গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বার্তাটি প্রধানত মেসেজ ইনবক্সের মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। অনেকে না বুঝেই সেটা আবার শেয়ার করছেন৷

গুজবে বলা হচ্ছে, শুক্রবারে জুমার নামাজের পর একযোগে এটা করতে হবে৷ ৫০০ গ্রাম হারপিক ও ৫০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার একযোগে ঢাললে ড্রেনে যত মশা আছে সব মরে যাবে।

তবে এই প্রচারণা যে গুজব তাও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারছেন৷ তাই তারা নানা কাউন্টার ব্যঙ্গ পোস্টও দিচ্ছেন৷ এই গুজবের উৎস কী ও কারা ছাড়াচ্ছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ ইনবক্সে যেসব বার্তা আসছে সেই আইডিগুলো ভেরিফায়েড নয় এবং ফেক আইডি বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, হারপিক আর ব্লিচিং পাউডার বেসিনে ঢালার নির্দেশ পুরোই গুজব। গুজবে কান দেবেন না। এতে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বদলে ক্ষতি হবে আরও বেশি।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হারপিক বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে মশা মারার এই কথাটির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ লিকুইড টয়লেট ক্লিনারের উপাদান হলো কিলোলিক কম্পাউন্ড উইথ হাইড্রো কার্বন চেইন৷ এতে অ্যাসিড এবং এন্টিসেপটিক উপাদান আছে৷ ফেনা তৈরির উপাদান আছে৷ ব্লিচিং পাউডার তৈরি হয় ক্যালসিময়াম হাইড্রোক্লোরাইড থেকে৷ এর কোনেটিতেই মশা মরার উপাদান নেই৷ মশা মরার জন্য নিমের উপাদান থাকতে হয়৷ নিমপাতার রস ছিটিয়ে দিলে মশা মরে যায়। নিম পাতার কাছে মশা আসে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ‘এটা হলো বায়ো ডাইভার্সিটি ধংস করার একটা চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এই গুজব ছাড়ানো হচ্ছে৷ হারপিক এবং ব্লিচিং পাউডার পানির ক্ষতি করে৷ এখন যদি এই গুজবের কারণে আমাদের ডোবা, নালা, নর্দমা বা জলাশয়ে এগুলো একযোগে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। আর আমাদেরতো এখন এডিস মশা মারা প্রয়োজন। তারাতো নর্দমা বা ডোবায় জন্মায় না। তার জন্মায় ঘরবাড়ির পরিস্কার স্বচ্ছ পানিতে।

টয়লেট ক্লিনার হারপিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বহুজাতিক কোম্পানি রেকিট অ্যান্ড বেনকিজার লি.। এই প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের টেরিটরি ম্যানেজার হামিম হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, আসলে মশা মারার জন্য হারপিকের ব্যবহার গুজব ছাড়া আর কিছুই না। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হারপিক টয়লেট ক্লিনার। এটা মশা মারার জন্য নয়। আমাদের মশা মারার একটিই প্রোডক্ট ছিল মরটিন। তার উৎপাদন এখন বন্ধ আছে। তিনি দাবি করেন, এই গুজবের সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই।