‘ডেল্টা’ ধরনের বিপদ কাটতে না কাটতেই ভারতে এবার ‘ডেল্টা প্লাস’

ভারতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ের রেশ কাটতে না-কাটতেই তৃতীয় ধাক্কার বার্তা নিয়ে উপস্থিত ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন। ইতোমধ্যেই দেশটির তিন রাজ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে ওই নতুন স্ট্রেনটি।

বুধবার (২৩ জুন) আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল করোনাভাইরাসের থেকে চরিত্র বদল করা ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনটি সংক্রমণের নিরিখে প্রবল শক্তিশালী।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এক বার ওই স্ট্রেন ছড়াতে শুরু করলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা কার্যত দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে। ইতিমধ্যেই ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের কারণে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে ব্রিটেনে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, পোলান্ড, সুইৎজারল্যান্ড, জাপান-সহ ৯টি দেশে চোখ রাঙাচ্ছে ডেল্টা প্লাস। ভারতে ইতিমধ্যেই তিনটি রাজ্যে ২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন ওই স্ট্রেনে। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, এত দিন যে পদ্ধতিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা হয়ে এসেছে, ডেল্টা প্লাসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা-ও কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ডেল্টা প্লাসের সংক্রমণকে একেবারে গোড়াতেই বাঁধা না-গেলে দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়েও বেশি মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন।

একাধিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, যে ভাবে লকডাউন উঠতেই কোভিড বিধিকে অগ্রাহ্য করে জনতা রাস্তায় নেমে পড়েছে, তাতে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী এবং আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে তা ভারতে আছড়ে পড়বে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে তৈরি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

ডেল্টা প্লাসকে গোড়াতেই রুখতে আজ মহারাষ্ট্র, কেরল ও মধ্যপ্রদেশকে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্র। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিঠিতে জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি ও জলগাঁও, কেরলের পলক্কড় ও পঠানামথিট্টা এবং মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও শিবপুরী জেলার করোনা আক্রান্তদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করে ২২ জনের শরীরে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশে ডেল্টা স্ট্রেনের কারণে অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই স্ট্রেন দ্রুত গতিতে ছড়ায় ও খুব অল্প সময়ে বহু মানুষকে আক্রমণ করে।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের সম্পর্কে বিশদে এখনও জানা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এই স্ট্রেন আগামী দিনে কী ভাবে চরিত্র বদল করবে, তা নিয়েও কারও বিশেষ কোনও ধারণা নেই।

প্রাথমিকভাবে আজ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে তিন রাজ্যকে সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, প্রবল সংক্রামক ডেল্টা প্লাস স্ট্রেনের ভাইরাস ফুসফুসের কোষকে আরও দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে থাকে। ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হয় বেশি। এ ছাড়া এই স্ট্রেনের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ ভাবে কমে যায়। সেই কারণে যে এলাকাগুলিতে ডেল্টা প্লাসের নমুনা পাওয়া গিয়েছে, সেখানে নজরদারি কয়েক গুণ বাড়ানো দরকার। চিঠিতে তিন রাজ্যের মুখ্যসচিবের উদ্দেশে বলা হয়েছে— ওই এলাকাগুলিকে অবিলম্বে কনটেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পরীক্ষা বাড়াতে হবে, আক্রান্তরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তা দ্রুত চিহ্নিত করতে হবে। ডেল্টা প্লাস ছড়ানো এলাকাগুলিতে একশো শতাংশ টিকাকরণে জোর দিতেও বলা হয়েছে।