ঢাবি শিক্ষককে লাথি মারলেন প্রক্টর, নাক ফাটালেন আরেক সহকর্মী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ক্যাফেটেরিয়ায় পূর্ব নির্ধারিত এক সভায় অংশ নিয়ে আবারও হট্টগোল করেছেন সরকার সমর্থিত নীল দলের শিক্ষকরা। এমনকি এক পর্যায়ে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কয়েকটি কথার জবাব দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীনকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।খবর চ্যানেল আই অনলাইনের।

‘এরপর প্রক্টরের সঙ্গে যোগ দেন রসায়ন বিভাগের শাহ মুহাম্মদ মাসুম। তিনি আমাকে ঘুষি মারেন, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার আমাকে আবারো ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন’ বলেন অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং নীল দলের আহ্বায়ক কমিটিসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ওই বৈঠকের আহ্বান করা হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে তিন থেকে চার শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

প্রথমে বক্তব্য দেন ফলিত রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামান। তার বক্তব্যে তিনি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের গ্রহণ করা বিভিন্ন উদ্যোগের সমালোচনা করেন এবং তার অনুসারীদের সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব দেন। একই ধারাবাহিকতায় বক্তব্য চলতে থাকে। প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বক্তব্য দেন। এক পর্যায়ে আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র বের করার আহ্বান জানান।

সব শেষে বক্তব্য দিতে আসেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দীন। তিনি বলেন: আমার বক্তব্যে আমি আরেফিন সিদ্দিক স্যারকে নিয়ে সমালোচনাকারীদের প্রতিবাদ জানাই এবং শিক্ষকদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কয়েকটি কথার জবাব দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লাথি দেন এবং মাটিতে ফেলে দেন।

‘এরপর প্রক্টরের সঙ্গে যোগ দেন রসায়ন বিভাগের শাহ মুহাম্মদ মাসুম। তিনি আমাকে ঘুষি মারেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার আমাকে আবারো ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন।

এসময় নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমদসহ অন্যরা তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।’

এরপর আহত অধ্যাপক জামালকে নিয়ে যাওয়া হয় উপাচার্যের বাসায়। উপাচার্য নিজে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসককে ডেকে চিকিৎসা দেন।

এসময় অধ্যাপক আবদুল আজিজসহ উপস্থিত সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর আচরণের সমালোচনা করেন এবং তদন্ত করে বিচারের দাবি করেন। একদিনের মধ্যে প্রক্টর পদত্যাগ না করলে আন্দোলনের ঘোষনা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজ বলেন: আমার ৬৩ বছরের জীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি। একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের উপর হামলা করতে পারে, এমনটা কল্পনার বাইরে। এ ঘটনায় আমি লজ্জিত, বিব্রত এবং শঙ্কিত। উপাচার্য এই ঘটনাকে ওনার নিজের উপর হামলা হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছি। যদি প্রক্টর পদত্যাগ না করেন তাহলে আমরা আন্দোলনে যাবো’।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে একেএম গোলাম রাব্বানি বলেন: আমি কারও গায়ে হাত তুলিনি। অধ্যাপক জামালই প্রথমে আমাকে ধাক্কা দেয়। পরে অন্য শিক্ষকরা তাকে থামাতে এগিয়ে আসলে তিনি আহত হতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এর আগে গত ৭ মে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে একই ধরণের সাধারণ সভা পণ্ড হয়ে গিয়েছিলো। ওই সভায় শিক্ষকদের মধ্যে দফায় দফায় হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছিলো।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। আগামী ৬, ১৩ ও ২০ জানুয়ারি তিন ধাপে ঢাকার তিনটি কেন্দ্র ও সারা দেশের ৪২টি কেন্দ্রে এ নির্বাচন হবে। ফল প্রকাশ করা হবে ২১ জানুয়ারি।