তিন দাবি নিয়ে ৪৮ দিন শাহবাগে শিক্ষকরা

তিন দাবি নিয়ে ৪৮ দিন শাহবাগে তারা গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছেন এনটিআরসিএ নিবন্ধিত শিক্ষকরা
রাজধানীর শাহবাগে গত ৪৮ দিন ধরে অবস্থান করছেন প্যানেল প্রত্যাশী বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত শিক্ষকরা।

শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, ৩ দফা দাবিতে তারা গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচিতে দুই শতাধিক প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষকরা অংশ নেন।

তাদের দাবিগুলো হলো এক আবেদনে নিবন্ধনধারী চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবিহীন প্যানেলে নিয়োগ, চাকরি প্রত্যাশীদের স্ব স্ব নীতিমালায় নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত রাখা এবং ইনডেক্সধারীদের প্যানেলের অন্তর্ভুক্ত না করে আলাদা বদলির ব্যবস্থা করা।

গণঅনশন করা শিক্ষকরা বলেন, এনটিআরসিএ’র দ্বিমুখী নীতির কারণে কেউ ৪০ নম্বর পেয়ে চাকরি করছেন, কেউ ব্লক পোস্ট পেয়ে চাকরিতে যোগদান করছেন। আবার অবৈধ সনদ দিয়েও চাকরি করছেন অনেকে। অথচ অযোগ্য হচ্ছে বৈধ সনদধারীরা। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক শূন্যতায় ভুগছে। তথ্যমতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৫ হাজার পদ এখনও খালি। এবার ৫৪ হাজার ৩০৭টি পদ থেকে আবার খালি থাকছে প্রায় ৪০ হাজার পদ। ১-১৬তম সব নিবন্ধনধারী যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে সনদ অর্জন করেছের। তারা আরও বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে এবং শিক্ষক সংকট দূর করতে এখন প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের বিকল্প নেই।

কুড়িগ্রামের রৌমারী থেকে আসা আন্দোলনকারী আফজাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ১২তম নিবন্ধনে আমার উপজেলায় আমি প্রথম হয়েছি। ২৩০টা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি কিন্তু চাকরি হয়নি।

প্যানেল প্রত্যাশী নিবন্ধিত শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মো. আমির হোসেন বলেন, এনটিআরসিএ নিবন্ধিত সনদধারী চাকরি প্রত্যাশী রয়েছেন প্রায় ৪০ হাজারের বেশি। প্রতিটি নিবন্ধন পরীক্ষায় যারা সনদধারী হয়েছেন তাদের চাকরি নিশ্চিত করে পরবর্তী নিয়োগ দেওয়া উচিত। নয়তো এ ধরনের একটা পাবলিক পরীক্ষায় পাস করেও আমাদের মত হাজার হাজার নিবন্ধিত শিক্ষকরা বঞ্চিত হবেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি তারপরও এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না। যতদিন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত না আসবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

শিক্ষকরা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন ছাড়া কোনো ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এটা বাস্তবায়নে প্রতি বছর অক্টোবর মাসে উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট থানাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ ও বিষয়ভিত্তিক পদ জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর দাখিল করবেন। জেলা শিক্ষা অফিসার উক্ত তালিকার সঠিকতা যাচাই করে নভেম্বর মাসের মধ্যে এনটিআরসিএ’র অনুকূলে পাঠাবেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা আরও জানান, এনটিআরসিএ সেই তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। এভাবেই চলছিল এনটিআরসিএ’র বাৎসরিক পরীক্ষা গ্রহণ। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সনদ পেলেও সনদের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর।

তারা বলেন, ২০১৩ সালের ২০ মে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে হাইকোর্টের রায়ে ১-১২তমদের সনদের মেয়াদ আজীবন করা হয়। ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে পাস হয় নতুন গেজেট। ২০০৬ সালে প্রকাশিত গেজেটের আলোকে পূর্ব নিবন্ধিত শিক্ষকদের নিয়োগের কোনো সুরাহা না করে এককভাবে প্রার্থী নির্বাচন করে শূন্য পদে নিয়োগ সুপারিশের উদ্দেশ্যে ১৩তমদের পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়োগ বঞ্চিত ১-১২তমদের কিছু অংশ আদালতের দ্বারস্থ হন। এতে আটকে যায় নিয়োগ সুপারিশের কার্যক্রম।