থানা লুট ও পুলিশ সদস্য হত্যার ৩০ বছর পর গ্রেফতার

৩০ বছর ধরে পালিয়ে আসছিলো হত্যা ও থানা লুটের মামলার এক আসামি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তার। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে হয়েছে র‍্যাবের হাতে।

থানা লুট, পুলিশ সদস্যকে হত্যা ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি ‘চরমপন্থি’ সাইফুল ইসলামকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান বাহিনীর কর্মকর্তারা।

এ সময় র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, থানা লুট ও কনস্টেবল খুনের ঘটনায় ১৯৮৯ সালে সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

জামিনে বেরিয়ে তিনি ৩০ বছর ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। জামিনে মুক্ত হয়ে চরমপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাইফুল বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

এক চরমপন্থীকে ছিনিয়ে নিতে প্রায় তিন যুগ আগে নাটোরের গুরুদাসপুর থানায় হামলা চালিয়ে অস্ত্র লুট ও এক কনস্টেবলকে হত্যা করেছিলেন সাইফুলের সহযোগীরা।

ওই মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। সাইফুল নামের এই ব্যক্তিই ছদ্মবেশ নিয়ে তিন দশক ধরে পলাতক ছিলেন বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

তিনি জানান, সাইফুল দলের সঙ্গে আবারও হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

দলের নেতা তারেকের সঙ্গে তিনি নৌকায় বিলের মধ্যে অবস্থান করতেন। ওই সময় সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় নৌকার মধ্যেই জীবন যাপন করত চরমপন্থীরা।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৪ সালে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে দলের নেতা তারেকের নির্দেশে সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন।

তখন সাইফুল ইসলাম ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় কিছুদিন তিনি বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ট্রাকে মালামাল ওঠানামার কাজও করেছেন।

পরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। এ সময় তিনি নিজের পরিচয় লুকিয়ে ছাত্তার নাম ধারণ করেন।

পাশাপাশি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে সেখানেই বসবাস করছিলেন। রূপগঞ্জে সাত্তার নামে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন।

নারায়ণগঞ্জে বসবাস করলেও সাইফুল সর্বহারা দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তবে চরমপন্থী দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে তারেক খুন হলে তিনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন।

বর্তমানে ওই ঘটনায় জড়িত চরমপন্থি দলের সদস্যদের সাথে তার কোনো যোগাযোগ ছিল না। তারেকের মৃত্যুর পর ওই গ্রুপের সদস্যরা বিছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেফতার সাইফুল ইসলামকে পাবনার চাটমোহর থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

লেফট্যানেন্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ১৯৮৪ সালে চরমপন্থি নেতা তারেকের মাধ্যমে সর্বহারা দলে যোগ দেন।

চরমপন্থি নেতা তারেক প্রতি সপ্তাহে চাটমোহর এলাকায় উঠতি বয়সের যুবকদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে উঠান বৈঠক করতেন।

তিনি বলতেন, তার দলে যোগ দিলে অভাব-অনটন থাকবে না। তারা সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করবেন। কেউ তাদের কাজে বাধা দিলে তাদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হবে।

যদি সরকার বা সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তবে তারা পুলিশ হত্যা করে থানা-ফাঁড়ি লুট করবেন।

তাদের এমন কথায় মুগ্ধ হয়ে সাইফুল হত্যা, লুটপাট, ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, ১৯৮৮ সালে তারেকের নেতৃত্বে চাটমোহর থানার খোতবাড়ি এলাকায় মাঠের মধ্যে রাতে নকশালপন্থি ও সর্বহারাদের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ হয়।

এ ঘটনায় নকশালপন্থি ১২ জন নিহত হন। ঘটনার পর সাইফুলসহ সর্বহারা দলের সদস্যরা চলনবিলে গোসল করে যার যার বাড়িতে চলে যান।

ভোর হলে পুলিশ ১২টি লাশ উদ্ধার করে থানায় মামলা রুজু করে। মামলায় আসামি সাইফুল গ্রেফতার হন। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুদাসপুর থানার অস্ত্র লুটের সত্যতা বেরিয়ে আসে।

ওই মামলাগুলোতে জামিনে মুক্ত হয়ে সাইফুলের পলাতক জীবন শুরু হয়। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি আদালতে হাজিরা দেননি। থানা লুট ও হত্যা মামলাসহ তার নামে ৫টি মামলা রয়েছে।