টকশোতে সিপিবি সভাপতি

‘দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে হয় না’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে হয় না। জনগনের এই অনুধাবনকে আমলে নিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা উচিত।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যমুনা টেলিভিশনে টকশো ‘রাজনীতি’ অনুষ্ঠানে সেলিম এ মন্তব্য করেন।

সিপিবি সভাপতি বলেন, সংবিধানের ৭ নং অনু্চ্ছেদে বর্ণনা আছে যে, প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। এই জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে করতে হয়। আর জনগণ যদি ঠিকমত তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ না পায় তাহলে গোড়ায়ই তার গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাগাঘাত করা হয়। তখন গণতন্ত্রের ভিত্তি আর থাকে না।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো- সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আর প্রয়োজন হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বর্তমানে নাই। কারণ, নির্বাচন এখন টাকার খেলা, পেশিশক্তির দাপট, প্রশাসনিক কারসাজি এগুলোর ভেতর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। তাছাড়া গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধির ব্যবস্থা চালু করা একান্তভাবে প্রয়োজন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশবাসীর অভিজ্ঞতা হলো, একটা দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। সত্য হোক, মিথ্যা হোক, জনগণের এই পারসেপশনটাকে বিবেচনায় নিয়ে একটা নির্বাচনকালীন সরকার একটা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা উচিত। আর পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নির্বাচন করা উচিত। এবং নির্বাচন কমিশনকে সেই অনুযায়ী গঠন করা উচিত।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বলেন, “সরকারি দল সংবিধানের দোহাই দেয়। তারা বলে আমরা সংবিধান অনুসারে নির্বাচন করবো। আমি তাদের বলবো সংবিধান তো সংশোধনের বিধান আছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলছে, ‘আমরা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবো, ওই সরকার শুধু রুটিন কাজ করবো।এখন মজার ব্যাপার হলো, সংবিধানে কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকার ও রুটিন কাজ শব্দটাও নাই। এখন তারা মুখে যা বলছে, তা যদি আন্তরিকভাবে বলে থাকে তাহলে যা সংবিধানে নাই সেটা বিল এনে সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে না কেন? তার আগে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই আমরা কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছতে পারি।”

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বলে যে, আন্তর্জাতিক রেওয়াজ অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যে গ্রেট ব্রিটেনে পার্লামেন্টারি সিস্টেমের উদ্ভব হয়েছে সেখানে ক্ষমতাসীন সরকার প্রধান রানীর কাছে গিয়ে বলেন যে, আমার সরকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করুন। আমি সবার পদত্যাগপত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তখন রানী বলেন, ঠিক আছে পার্লামেন্টারি ইলেকশন হবে। নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যান।’

তিনি বলেন, আরেকটা কথা বলছে ক্ষমতাসীনরা। হাতে তো সময় নাই। কিন্তু আমি তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, এরশাদের পতনের পর মাত্র ১২ ঘণ্টার ভেতরে আমরা শাহাবুদ্দীন সাহেবের নাম ডিসাইড করে ফেললাম, সবাই একমত হয়ে গেলাম। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এটা (সংবিধান সংশোধন) করা সম্ভব।

টকশো-তে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসির সম্পাদক জাহেদুল আহসান পিন্টু।

জামায়াত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে নূহ-উল আলম লেলিন বলেন, সংবিধান জামায়াতকে রাজনীতি করার অধিকার দেয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেছেন। শুধু আওয়ামী লীগই জামায়াত ইস্যুতে কাজ করেছে অন্যান্য সব দল শুধু বক্তৃতা দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দলীয় অবস্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম নীতি বিবর্জিত। তারা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাথে জোট করেছে, যারা ২১ আগস্টে গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল।

লেনিন দাবি করেন, বিরোধীদলের প্রতি প্রতিহিংসার কারণে নয়, বরং পুলিশ তাদের দোষের কারণেই মামলা দিয়েছে। রাজনীতিতে অসহিষ্ণুতা চর্চার নিয়ে তিনি বলেন, কোনো দলই অসহিষ্ণুতার রাজনীতির বাইরে যেতে পারেনি। আমাদের দেশে এমন রাজনীতির প্রসার ঘটেছে বিএনপি সরকারের সময়। তারা আহসানউল্লাহ মাস্টার, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া সরকার, সংসদ সদস্য মমতাজউদ্দিনকে হত্যা করেছে।

বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের স্বার্থেই নির্বাচনকালীন সরকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানে না থাকলেও জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে এটা কঠিন কোনো বিষয় না। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সরকার গায়েবী মামলা দিয়ে বিরোধীদের দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে। এর মাধ্যমেই প্রমাণ মেলে যে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ভোট চুরি হয়েছে। আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা নমিনেশন পর্যন্ত জমা দিতে পারেনি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতাসীনদের অনেকে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন।