নরসিংদীতে কারখানার ফটকে অবস্থান করা চীনের এক নাগরিক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

নরসিংদীর একটি সুতা তৈরির কারখানায় চীনা অপারেটর নিহতের ঘটনায় পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে টানা পঞ্চম দিনের মতো অবস্থান করা স্বজনদের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ সোমবার রাত আটটায় সদর উপজেলার শিলমান্দী এলাকার ফুজিয়ান ওনান টে·টাইল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের ওই কারখানার ফটকে অসুস্থ হয়ে পড়েন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ঝিং মেইলিং।

অসুস্থ হওয়ার পর কারখানাটির কর্মকর্তা ও ঝিং মেইলিংয়ের স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জররি বিভাগে নেন। বর্তমানে হাসপাতালটির নারী ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঝিং মেইলিং কারখানাটির নিহত অপারেটর লি রোং হোয়ার (৫৭) স্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে আজ রাত ৮টা পর্যন্ত টানা ৫ দিন ধরে কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন ঝিং। গত ৮০ ঘণ্টায় বিভিন্ন সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছেলে লি রংইয়ানসহ চীন থেকে আসা চার স্বজন। নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ ও নরসিংদী জেলা পুলিশের সদস্যরা তাঁদের নিরাপত্তা দিচ্ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নওশাদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ দিন ধরে তাঁরা কখনো দুজন বা তিনজন কারখানা ফটকের সামনে অবস্থান করছিলেন। প্রচ গরমে টানা অবস্থানের কারণে ঝিং নামের ওই নারী আজ রাত আটটার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের জররি বিভাগে নিই। তাঁকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
জানতে চাইলে নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বলেন, প্রচ গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে থাকতে পারেন। তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল। তাঁকে প্রাথমিকভাবে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তিনি হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষর ভাষ্য, কারখানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৩ মে দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিটে লি রোং হোয়া বেল্ট মেশিনে কাজ করছিলেন। সে সময় মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে তিনি মেশিন বন্ধ না করে চালু অবস্থাতেই তা মেরামত করতে শুর করেন। মেশিনের ওপর দাঁড়িয়ে মেরামত করার একপর্যায়ে লি রোং ভেতরে পড়ে যান। এতে কোমর বরাবর দ্বিখতি হয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ৭ মে চীন থেকে আসেন তাঁর স্বজনেরা। তাঁরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১১ মে থেকে কারখানাটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলেও তাঁরা এতে সন্তুষ্ট নন। নিহত ব্যক্তির লাশ ১২ দিন ধরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের খরচে ৭ মে চীন থেকে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের আনা হয়। এর চার দিন পর তাঁরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। চীনের শ্রম আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটলে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় সর্বোচ্চ যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, এর চেয়ে বেশি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও তাঁরা পাঁচ দিন ধরে ফটকের সামনে অবস্থান করছেন। বর্তমানে কারখানা ফটকের সামনে অবস্থান করছেন নিহত ব্যক্তির স্ত্রী ও ছেলে। চীন থেকে তাঁদের সঙ্গে আসা আইনজীবীসহ আরও দুজন এখন ঢাকায় আছেন চীনা দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কারখানামালিকের সঙ্গে আলোচনার জন্য।

জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারনুর রশিদ জানান, ‘চীন থেকে এসে পাঁচ দিন ধরে কারখানার ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া নিহত ব্যক্তির স্ত্রী অসুস্থ হয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জেনেছি। টানা অবস্থান ও প্রচ গরমে দুর্বল হয়ে তিনি অসুস্থ হয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা বলছেন।