নরসিংদীতে খায়রুল কবিরের বাড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পদবঞ্চিত নেতার দায় স্বীকার

নরসিংদীতে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরের (খোকন) বাসভবন ও জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ভাঙচুর—আগুন দেওয়ার দায় স্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া।

বুধবার (৩১ মে)রাত সাড়ে ৮টার দিকে সংবাদকর্মীর কাছে মুঠোফোনে নিজের কর্মী—সমর্থকদের নিয়ে ভবনটিতে ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন তিনি।

এর আগে বিকেল পাঁচটার দিকে ২০—২৫ জনের একদল দুর্বৃত্ত ওই ভবনে ঢুকে প্রতিটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সবগুলো কক্ষে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে অগ্নিকারে খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫টা ৪০ মিনিটে ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশেই ভবনটির অবস্থান। খায়রুল কবিরের এই বাড়ি থেকেই জেলা বিএনপির সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাড়িটি জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবেও পরিচিত।

জেলা ছাত্রদলের গত আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মাইন উদ্দিন গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু তাঁকে এই পদ না দিয়ে সিনিয়র সহসভাপতি করায় তাঁকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মনে করেন তাঁর কর্মী—সমর্থকেরা। এর পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বে কর্মী—সমর্থকেরা জেলা বিএনপিতে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন। এসবের জের ধরেই গত বৃহস্পতিবার পদবঞ্চিত নেতা—কর্মীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

মাইন উদ্দিন ভূঁইয়ার ভাষ্য, ‘গত বৃহস্পতিবার পদবঞ্চিত নেতা—কর্মীদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলিতে ছাদিকুর রহমান নিহত হওয়ার ঘটনায় এখনো খায়রুল কবির গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমাদের উত্তেজিত কর্মী—সমর্থকেরা তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছেন। আমাদের শতাধিক কর্মী—সমর্থক সেখানে গিয়েছিলেন, তবে বাড়িতে ঢুকেছেন ২০—২৫ জন। যত দিন পর্যন্ত তিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার না হবেন, তত দিন আমরা এই আন্দোলন—সংগ্রাম চালিয়ে যাব। আমরা চাই, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বিষয়ে দ্রত সিদ্ধান্ত নিন, খায়রল কবিরকে আমরা নরসিংদীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি। তারেক রহমানের কাছ থেকে ফয়সালা না পাওয়ার আগপর্যন্ত আমরা থামব না।’

মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব থাকা অবস্থায় ৩১টি মামলা খেয়ে ও অন্তত ২০ বার জেল খেটেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ পাইনি। অথচ কোনো অ্যাকটিভিটি নেই, বড় একজন নেতার ভাতিজা হওয়ায় একজন সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদ না দিয়ে আমাকে সিনিয়র সহসভাপতি করে অপমান করার বিষয়টি মানতে না পেরেই আমার সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচি করে যাচ্ছেন।’

বিএনপির নেতা—কর্মীরা বলছেন, আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ওই বাড়িতে দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে একদল দুর্বৃত্ত। তারা ভেতরে ঢোকার পর সবগুলো কক্ষের জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। পরে সবগুলো কক্ষেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারনুর রশীদ জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত বৃহস্পতিবার জেলা শহরের জেলখানা মোড়ে দুর্বৃত্তের হামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তাঁর কর্মী আশরাফুল হক গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছাদিকুরের মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে মারা যান আশরাফুল।

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ২৬ জানুয়ারি পদবঞ্চিত নেতাদের ২০—২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির ওই বাড়িতে বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ­াস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তাঁরা।
ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন পদবঞ্চিতরা। ১১ ফেব্রয়ারি শিবপুরের ঢাকা—সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবিরের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে।

৫ এপ্রিল কার্যালয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপরই গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের গুলিতে দুজন নিহত হন।