নাপা সিরাপে নয়, মায়ের পরকীয়ায় ‘সেই’ দুই শিশুকে হত্যা! মা গ্রেফতার

নাপা সিরাপ খেয়ে নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সেই দুই শিশুকে পরকীয়ার জেরে মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে তাদের মা লিমা বেগমই হত্যা করেছেন বলে দাবি পুলিশের।

এ ঘটনায় লিমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন।

এ ঘটনায় নিহত দুই শিশুর বাবা ইসমাঈল হোসেন বাদী হয়ে লিমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।

মারা যাওয়া দুই শিশু হলো আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীন জানান, লিমা বেগম আশুগঞ্জের একটি চালকলে কাজ করেন। আর তার স্বামী কাজ করেন ইটভাটায়। চালকলে কাজ করার সুবাদে আরেক শ্রমিক সফিউল্লার সঙ্গে লিমার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তারা বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি আরও জানান, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে দুই শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিনকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে হত্যা করেন মা লিমা। মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নাপা সিরাপের রিঅ্যাকশন হয়েছে বলে প্রচার করেন, কিন্তু লিমার আচরণ প্রথমেই পুলিশের সন্দেহ হয়। অধিকতর জিজ্ঞাসায় তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় লিমার প্রেমিক সফিউল্লাকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এর আগে গত ১০ মার্চ আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিন নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যায় বলে অভিযোগ উঠে।

জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে।

এ ঘটনাকে ‌‌‘পরিকল্পিত হত্যা’ উল্লেখ করে বাদী হয়ে মামলা করেছেন মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে ওই দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুদের মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

অভিযোগ ওঠে, ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ ১০ মার্চ দিনগত রাতে শিশু দুুটি মারা যায়। ওই সময় শিশুদের মা লিমা বেগম দাবি করেন, ‘দুদিন ধরে মোরসালিন খানের জ্বর হয়। এরআগে থেকে ইয়াসিন খানেরও জ্বর ছিল। ঘটনার দিন বিকেলে দুই শিশুর দাদি পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ নিয়ে আসেন। দুই শিশুকে সিরাপ খাওয়ানোর পর তারা বমি করতে শুরু করে। অবস্থার অবনতি হলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে পথে রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টার দিকে মোরসালিনও মারা যায়।’

এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘নাপা সিরাপ’ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল, সেখান থেকে জব্দ করা বাকি সিরাপ পরীক্ষায় মান সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।