‘নির্বাচন সুষ্টু করতে বন্ধুরাষ্ট্র সহায়ক হলে স্বাগত জানাব’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, নির্বাচন কাউকে বাধাগ্রস্ত করতে দেওয়া হবে না। যদি নির্বাচন সুন্দর-সুষ্ঠু হওয়ার জন্য কোনো বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের সহায়কের ভূমিকা পালন করে, আমরা স্বাগত জানাব।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা)-এর উদ্যোগে চ্যারিটি বাজার উদ্বোধনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

যুক্তরাষ্ট্র সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে, সংলাপের বা অন্য কোনো চাপ আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ৫০ বছরের অধিক সময়ের বন্ধু দেশ। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় বিনিয়গকারী দেশ। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় ব্যবসার দেশ। তারা আমাদের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। এবং সে জন্য তারা বিভিন্ন সময়ে অনেক উপদেশ দেয়। আমরা সেই উপদেশগুলো যাচাই-বিচার করে যেটা আমাদের দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ভালো মনে হয়, সেটা গ্রহণ করি। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে সংলাপের প্রস্তাব এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনও সংলাপে পিছপা হয় না। আওয়ামী লীগ মনে করে সংলাপ ভালো, যদি নির্বাচন সুন্দর সুষ্ঠু হওয়ার জন্য কোনো বন্ধুরাষ্ট্র আমাদের সহায়কের ভূমিকা পালন করে, আমরা স্বাগত জানাব।

বিদেশে অবস্থানরত সাংবাদিকরা বিদেশিদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে টেনে আনে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মুখোমুখি অবস্থানের দিকে যাবে কি না— এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই যাবে না। পৃথিবীতে প্রায় ১৭৩টা দেশে নির্বাচন হয়। আমেরিকা কী ১৭৩টা দেশ সম্পর্কেই বলে, না। বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিদিন আমেরিকার একটি বক্তব্য থাকে। এর মূল কারণ হলো— আমাদের বাঙালিরাই তাদের জোর করে আভ্যন্তরীন বিষয়ে টেনে আনে। তারাই বলেছে, তারা কোনো দলকে সমর্থন করে না। সব দল আমাদের কাছে সমান। তার পরেও আমাদের এই বাঙালি সাংবাদিকরা জোর করে টেনে আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যুক্ত করার চেষ্টা করে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, আমাদের লোকরাই আমাদের দেশ ধ্বংস করার জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা কিন্তু সবসময় বলছে, তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তার মধ্যে কখনও কখনও তারা যোগ করে সংঘাতবিহীন নির্বাচন। আমি আগেও আপনাদের বলেছি, আমাদের এই উপমহাদেশে নির্বাচনের সময় যথেষ্ট সংঘাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র একটি পরিপক্ব গণতন্ত্র, সেখানেও সংঘাত হয়, আমাদের দেশেও হয়। তবে দিনে দিনে কমছে। সংঘাত দূর করতে সব দলের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকতে হবে।

বিএনপির সমালোচনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগ করেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিএনপি ২৮ অক্টোবর একটি শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দেউ। কিন্তু সেখানে তাদের মূল লক্ষ্যই ছিল জ্বালাও-পুড়াও-অগ্নিসন্ত্রাস। এমনকি যারা কোনো দলের নয়, যেমন বিচারক, পুলিশ, হাসপাতাল- সেগুলাও তারা জ্বালাপ-পুড়াও করল। সাধারণ মানুষের প্রায় ১৫৪টি গাড়ি জ্বালাও-পুড়াও করল। এটা তো শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রা না।

তিনি বলেন, আমরা আশা করব, যারা বিপথগামী দল আছে। যারা এখনও উপনিবেশিক মনমানসিকতায় ভুগে , তাদের পরপক্বতা অর্জিত হবে, এবং তারা নির্বাচনমুখি হবে। আমরা যেন অত্যন্ত মডেল একটি নির্বাচন করতে পারি তাতে তারা আমাদের সাহায্য করবে।

এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (এফওএসএ) আয়োজিত চ্যারিটি বাজার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।