নুসরাত হত্যা: এবার ছাত্রলীগ নেতা শামীম গ্রেপ্তার
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ।
ঢাকাটাইমসের ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান মনোনেশ দাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের জনতা গেস্ট হাউজ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নুসরাত হত্যার প্রধান আসামি ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার নিজস্ব বলয়ের অন্যতম সদস্য শামীম। তিনি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের একজন। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা।
মনোনেশ দাস জানান, জনতা গেস্ট হাউজটি তাদের পৈত্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার রাতে আবাসিক এই হোটেলটির এন্ট্রি খাতায় শামীমের নামঠিকানা অসঙ্গতি দেখে হোটেলে কর্মরত একজন স্টাফ তাকে মোবাইল করেন। পরে মোবাইলে মনোনেশের সঙ্গে কথা বলার সময় শামীম জানান তার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজীর ভুইয়াবাজারে। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক।
মনোনেশ তাৎক্ষণিক বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করলে পুলিশ জনতা গেস্ট হাউজে গিয়ে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে ময়মনসিংহে নিয়ে যায় পিবিআই।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা প্রত্যাহার না করায় গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
মৃত্যুশয্যায় দেওয়া তার জবানবন্দি অনুযায়ী, পরীক্ষার হল থেকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নেওয়া হয়েছিল নুসরাতকে। সেখানে নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান যে মামলা করেন, সেখানে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
অন্য আসামিদের মধ্যে শামীম, জাবেদ ও নূর উদ্দিন ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার সময় বোরকা পরা যে চারজন ছিলেন, তাদের মধ্যে নূর উদ্দিন ও শামীম থাকতে পারেন বলে সন্দেহ স্থানীয়দের।
নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, নূর উদ্দিন ও শামীম ছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ’। নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার মামলায় সিরাজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার মুক্তি দাবির আন্দোলনেও এরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন।
নুসরাত হত্যা মামলায় শামীমকে নিয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম, মাদ্রাসার ইংরেজী অধ্যাপক আফচার উদ্দিন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্লাহ, নুসরাতের সহপাঠী ও অভিযুক্ত অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, মাদ্রাসা ছাত্র নুর উদ্দিন, নূর হোসেন, শহীদুল ইসলাম, জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন, আরিফুর ইসলাম ও আলাউদ্দিন।
এদের মধ্যে নয়জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে রয়েছেন। কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।
এই রকম সংবাদ আরো পেতে হলে এই লেখার উপরে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেইজে লাইক দিয়ে সংযুক্ত থাকুন। সংবাদটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে হলে এই পেইজের নীচে মন্তব্য করার জন্য ঘর পাবেন