নড়াইলে সরিষার মধু সংগ্রহে ব্যস্ত চাষিরা

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় মাঠের পর মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে। তাই মধু চাষিরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন সরিষার ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহে।

উপজেলার মরিচ পাশা, গন্ডব, কামঠানা, কালনা, লাহুড়িয়া, দিঘলিয়া, নলদী, চাচই, আমডাঙ্গা, আড়িয়ারা, কাউড়িখোলা, শিয়রবর, মাকড়াইলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

ক্ষেতের পাশে পোষা মৌমাছির শত শত বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা। চাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা খেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে মোম দিয়ে তৈরি ৮ থেকে ১০টি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়। আর এর ভেতর রাখা হয় একটি রানি মৌমাছি। রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। আর এই চাক থেকেই মধু সংগ্রহ করেন চাষিরা। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মৌ-চাষিরা এসব মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন।

মৌ চাষের মাধ্যমে চাষিরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। সরিষা ফুলের মধু খাঁটি ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মৌচাষীরা এসেছে লোহাগড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

লোহাগড়া উপজেলার তেলিগাতী গ্রামে সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া থেকে আসা মৌ-চাষি মো. হাসু মিয়া জানান, আমরা সরিষা ক্ষেত থেকে বছরে চার মাস মধু সংগ্রহ করে থাকি। অন্য আট মাস কৃত্রিম পদ্ধতিতে চিনি খাইয়ে মৌমাছিদের পুষে রাখা হয়। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। তখন উপজেলার সর্বত্রই সরিষার ফুল ফোটে।

তিনি আরও বলেন, আকার ভেদে একটি বাক্সে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যায়। এখানে মৌ চাষের বিশেষ বাক্স কলোনি রয়েছে ১০০টি। প্রতিটি কলোনিতে খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর প্রতি কেজি মধু বিক্রি করা হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। এতে প্রতি কলোনিতে লাভ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা।

এ উপজেলায় আরও বেশ কয়েকটি চাষির দল রয়েছে। সব মিলিয়ে চাষিরা প্রতি মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ টাকার মধু সংগ্রহ করে থাকেন।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রইচ উদ্দিন বলেন, সরিষা খেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে কৃষক যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে খেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।