পশ্চিমবঙ্গের কাঁথির হাসপাতালে পাওয়া ওষুধ বংলাদেশের দেওয়া

বাংলাদেশের ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে। মঙ্গলবার এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।
মঙ্গলবার কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন অনেকে। তাঁদের কাউকে কাউকে ওই ওষুধ দিয়েছিল হাসপাতাল।

খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ওষুধ রাজ্যকে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশ সরকার ওই ওষুধগুলি ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রককে দান করেছিল বলে জানিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ওই ওষুধ দেওয়ার মধ্যে অনৈতিক কিছু দেখছে না স্বাস্থ্য দফতর। শুধু তাই নয়, ওই ওষুধ বৈধ বলেও জানিয়েছে তারা।

কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রোগীদের বাংলাদেশের ওষুধ দেওয়া নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।

সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ওই ওষুধগুলি গত বছর ৩ জুন রাজ্যকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘ওই ওষুধগুলি বাংলাদেশ সরকারের বিদেশ মন্ত্রক এ দেশে পাঠিয়েছিল। রাজ্যের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর থেকে ওই ওষুধগুলি নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গত বছর ৫ জুন এবং ৭ জুন পাঠানো হয়েছিল।’

মঙ্গলবার কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন অনেক রোগী। তাঁদের অনেককে প্রেসক্রিপশন মাফিক ওষুধ দিয়েছিল হাসপাতাল। কাউকে কাউকে দেওয়া হয়েছিল ডক্সিসাইক্লিন নামক অ্যান্টিবায়োটিকের স্ট্রিপ। ওই স্ট্রিপে বাংলা হরফে লেখা ছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয় বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’। ওষুধ কবে তৈরি বা কবে তার মেয়াদ শেষ— এমন কোনও তারিখও স্ট্রিপে উল্লেখ করা ছিল না। বিষয়টি নজরে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়।

সূত্র বলছে, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে একটা বিশাল পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই ওষুধের একটা বড় অংশ ছিল রাজ্যের মেডিসিন স্টোরে। সেই ওষুধও পাঠানো হয় পারে ওই হাসপাতালে।

উল্লেখ্র, ‘ডক্সিসাইক্লিন’ নামে ওই ক্যাপসুলের পাতার ওপরই লেখা রয়েছে-‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ, ক্রয়-বিক্রয় আইনত দণ্ডনীয়’।
ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি হল বগুড়ার এসেনসিয়াল ড্রাগস কোং লি.। এই ওষুধটি মূলত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের চিকিৎসা করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এদিকে, মঙ্গলবার এই ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলা প্রশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি জানান, বিষয়টি সামনে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের তরফে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কিভাবে ওই ওষুধ এখানকার হাসপাতালের স্টোরে এসে পৌঁছালো তা দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

যদিও সূত্রে খবর, সরকারিভাবেই কলকাতার স্টোর থেকে নাকি ওই ওষুধ জেলা হাসপাতালের পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসক দেখানোর পর রোগীরা স্টোরে বিনামূল্যের ওষুধ সংগ্রহ করতে গেলে সেখান থেকে দেওয়া হচ্ছিল বাংলাদেশি ওষুধ। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক অনির্বাণ চৌধুরীর এমন একটি প্রেসক্রিপশনই এদিন ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে উল্লেখিত ‘ডক্সিসাইক্লিন’ ক্যাপসুল আদতে একটি বাংলাদেশি ওষুধ।

এদিকে, বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক ভাবেও একে কাজে লাগাতে মরিয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি।

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানান, এ ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। ভারত যেখানে সারা বিশ্বে ওষুধ রপ্তানি করে, সেখানে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সরকারি স্টোরে বাংলাদেশি ওষুধ আসলো, তার প্রকৃত কারণ জানতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তেরও দাবি করেছেন তিনি। ওই ওষুধ বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে এসেছে নাকি অবৈধভাবে তা জানা প্রয়োজন বলে মনে করেন শুভেন্দু।

সূত্র বলছে, ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে একটা বিশাল পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছিল। সেই ওষুধের একটা বড় অংশ ছিল রাজ্যের মেডিসিন স্টোরে। সেই ওষুধও পাঠানো হয় পারে ওই হাসপাতালে।