বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন গ্রেফতার, জামিন নামঞ্জুর

মতিঝিল এলাকায় লিফলেট বিতরণকালে গ্রেফতার বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এই আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এর আগে দুপুরে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়।

বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লিফলেট বিতরণকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের লাগামহীন উর্ধ্বগতি রোধে সরকারের ব্যর্থতা এবং সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের দুর্নীতির বিরুদ্ধে’ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এই কর্মসূচি পালন করছিল।

এ সময় জনসচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণকালে ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ইশরাকের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইশরাককে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. এনামুল হক বলেন, ইশরাকের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগের পুরোনো একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ইশরাক হোসেন বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সদস্য। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক।

সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে ইশরাককে গ্রেফতার: রিজভী

সরকারের সব ব্যর্থতা ঢাকতে এবং জনদৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারের পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মতিঝিল এলাকায় শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে প্রচারপত্র বিলি করার সময় বিনা উসকানিতে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারুণ্যদীপ্ত বিএনপির এই বলিষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার সম্পূর্ণরূপে কাপুরুষোচিত ও ন্যক্কারজনক।

তিনি দাবি করেন, সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনের আশঙ্কায় ইশরাক হোসেনের মতো বিএনপির তরুণ নেতাকে গ্রেফতার করা শুরু হয়েছে। আমি ইশরাক হোসেনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সরকারের ব্যর্থতা আর ইচ্ছাকৃত অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি এখন চলছে গ্যাসশেডিং। বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এই আছে, এই নেই। লাইনে পানি আছে তো গ্যাস নেই। আবার গ্যাস থাকলে, পানি নেই। তীব্র গ্যাস সংকটে রোজা রেখে ইফতারিও তৈরি করতে পারছে না তারা। বাসায় যখন গ্যাস নেই, তখন তৈরি হয়েছে আরেক দুঃসংবাদ। ফের বাড়ানো হয়েছে এলপিজির দাম।

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাইরে থেকে ইফতারি কেনা মানুষের জন্য তৈরি করছে বাড়তি সংকট। রাজধানীর যানজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঘর থেকে বেরোলেই স্থবির হয়ে যায় জীবন। যানজটে অলিগলি, প্রধান সড়ক সর্বত্রই এখন স্থবিরতা। একে তো তীব্র গরম, তার ওপর অসহনীয় যানজট, জীবন যেন ওষ্ঠাগত। তীব্র যানজটের কারণে লোকজনকে এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় থাকতে হচ্ছে। যানজটের এখন আর সকাল-বিকাল বা রাত নেই। গভীর রাত এমনকি ভোরেও রাজধানীজুড়ে যানজট। ফলে লোকজন ঠিকমতো অফিসে বা কাজে যেতে পারছেন না, ফিরতে তাদের গাড়িতে বা রাস্তাতেই ইফতার করতে হচ্ছে।

রিজভী বলেন, সরকার বড় বড় কথা বলে, সারাক্ষণ সপ্তসুরে গলাবাজি করে। ছবিতে বড় বড় ফ্লাইওভার, উড়াল সেতু বড় বড় ব্রিজ, মেগাপ্রকল্প, দোতলা-তিনতলা রাস্তার ছবি দেখান যে, উন্নয়নে ভেসে যাচ্ছে দেশ। একেবারে প্রবল উন্নয়নের জোয়ারে বাংলাদেশ সয়লাব— এসব উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতে জনগণ ক্লান্ত হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান পথ না ছাড়লে বাংলাদেশের পরিণতিও একই হবে। কেবলই সময়ের অপেক্ষা।