পাহাড় ধসে ৩ জেলায় নিহত অর্ধশতাধিক

অতিবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে রাঙামাটিতে ৩০ জন, বান্দরবানে ৮ জন এবং চট্টগ্রামে ১২ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন সেনাসদস্যও রয়েছেন। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার রাঙাবালী, ভেদভেদি, শিমুলতলী ও মানিকতলী এলাকায় পাহাড়ধসে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে ১১ জনের মরদেহ রাঙামাটি সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মংক্যচিং মারমা জানান, পাহাড় ধসে নিহত ১১ জনের মরদেহ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণে বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন। এছাড়া মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় পাহাড় ধসে শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন।

রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ১৫ জন, কাপ্তাইয়ে তিনজন ও কাউখালীতে ১২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাঙামাটিতে সোমবার থেকে শুরু হওয়া বর্ষণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে ধসে পড়ে। ধসে পড়া মাটির নিচে এখনও অনেকে চাপা পড়েছেন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে বৃষ্টি কারণে উদ্ধার কাজ চালাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক করতে গিয়ে ক্যাম্পের পাহাড় ধসে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর, করপোরাল আজিজ, সৈনিক শাহীন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সেনাবাহিনীর আঞ্চলিক মুখপাত্র।

এছাড়া আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তারা হচ্ছেন, সৈনিক আজমল, মামুন, ফিরোজ, মোজাম্মেল ও সেলিম।

এদিকে মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবান শহরের লেমু ঝিড়ি পাড়া, কালাঘাটা ও ক্যচিংঘাটা এলাকায় পাহাড় ধসে তিন ভাইবোনসহ আটজন নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমুঝিরি আগাপাড়ারলাল মোহন বড়ুয়ার তিন ছেলে-মেয়ে শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)।

স্থানীয়রা জানান, ভোরে কালাঘাটার কবরস্থান এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েন রেবা ত্রিপুরা নামে এক শিক্ষার্থী। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, প্রসেন ত্রিপুরা ও সূর্য চাকমা নামে তিনজন।

এছাড়া লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে নিহত হয় শুভ, মিঠু ও লতা। এ সময় গুরুতর অাহত হন তাদের বাবা লাল মোহন বড়ুয়া।

বান্দরবান সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক উল্লাহ এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।