পিরোজপুরে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে মনগড়া ক্লাস রুটিন: প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে মনগড়া নিয়মে ক্লাস রুটিন তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে রুহুল আমিন নামে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।রুহুল আমিন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সরকারী হাতেম আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।এ অনিয়ম থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) স্বপন কুমার হাওলাদার ও রতন কুমার মিস্ত্রী (আইসিটি)।

জানা গেছে, ২৯ অক্টোবর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে ৩০ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন একাডেমিক সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম।কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি ওই সুপারভাইজার। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজশ করে দায়সারা দায়িত্ব পালন করেন তিনি।প্রধান শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় বিদ্যালয়টির অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা।

ইতোপূর্বে পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করাকালীন প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন অগ্রগামী করেন।সে প্রতিবেদনও গায়েব হয়ে গেছে। প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তৎকালীন নির্বাহী অফিসার বশির আহমেদ। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান,প্রধান শিক্ষক নিজের নামে রুটিনে ইংরেজি ক্লাস নেন।কিন্তু ক্লাস করান অন্য শিক্ষক দিয়ে। প্রশ্নপত্র তৈরি করেন বহিরাগত তার এক আত্মীয়কে দিয়ে। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে স্কুল শিক্ষকের চেয়ে বহিরাগত প্রধান শিক্ষকের ওই আত্মীয়ের গুরুত্ব বেশি। প্রধান শিক্ষকের মতের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার ওপর চালানো হয় মানসিক নির্যাতন।অফিস থেকে বের করে দেওয়া সহ টেবিলের ওপর থাকা শিক্ষকের নেমপ্লেট ভেঙে ফেলারও অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

কোন সহকারী শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নেয় না কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ সত্য না মিথ্যা তাও প্রমান করার চেষ্টা করেন না তারা।অভিযোগ পেয়ে সঠিক তদন্ত করতে শুধু ব্যর্থই হননা তারা।প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজশ করে অভিযোগকারী শিক্ষককে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যসহ হয়রানিও করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

কর্মকর্তাদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে সুফল না পেয়ে এখন আদালতে মামলা করারও অনু়ভুতি ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। তাদের দাবি,আমরা যদি মিথ্যা অভিযোগ দেই তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন?সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারীতার কারনেই মান সম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টিতে কারিগরি শাখা সংযুক্ত থাকলেও কোন কোন ট্রেডে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি পাওয়া যায় মাত্র ২/৩ জন।ব্যবহারিক ক্লাস হয় কিনা তার খোঁজ রাখে না কেউ। কারিগরি শাখায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দিয়ে জেনারেল শাখার ক্লাস নেওয়া হয়। তবে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষার পর অতিরিক্ত ক্লাস (কোচিং ক্লাসে) নেওয়ার সময় কারিগরি শাখার শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হয়। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষকের মনের অমিল হওয়া সহকারী শিক্ষকদের সাথে এরকম আচরন করা হয়।প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের গুরুত্ব নেই তার কাছে।মনগড়া নিয়মেই ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীর সেশন পরিচালনা করেছেন তিনি।

শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রেরিত ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রোনীর সংশোধিত ক্লাস রুটিন ফলো করা হয় কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব একাডেমিক সুপারভাইজারের। কিন্তু অভিযোগ না পেলে রুটিনের অসঙ্গতি দেখেও না দেখার ভান করেন তিনি। এমনকি লিখিত অভিযোগ পেয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা না করে প্রতিবেদনের নামে কালক্ষেপন করেন তিনি। সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে প্রধান শিক্ষকদের সাথে রফাদফা করে চলেন এই কর্মকর্তা।

তবে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান,আপনারা বিদ্যালয়ে এসে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।

একাডেমিক সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীর রুটিনে অন্তর্ভুক্ত না করে প্রশিক্ষনবিহীন শিক্ষকদের দিয়ে সেশন পরিচালনা করার বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দেওয়া হবে।তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর একেএম আবুল খায়েরকে একাধিকবার ফোন দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার ইদ্রিস আলী আজিযী জানান,বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাইয়ূম জানান, বিদ্যালয়টিতে সাধারণ শিক্ষার সাথে কারিগরি শিক্ষা চালু রয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষকরা কোন শাখায় আছে এবং তারা কোন শাখায় ক্লাস নিতে চায় তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।