পূরণ হতে চলেছে ১০ জেলাবাসীর স্বপ্ন

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার সঙ্গে সড়ক পথে ঢাকার যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ওপর কালনা ফেরিঘাটে নির্মাণাধীন কালনা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।

বাস্তবায়ন হতে চলেছে নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার মানুষের স্বপ্ন। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ ৩৬ ভাগ শেষ হয়েছে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। এই সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের সুলতান মঞ্চে এক নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এ অঞ্চলের উন্নয়নে লোহাগড়ার কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদীতে সেতু নির্মাণ করা হবে। ওই ঘোষণার আগে ও পরে আন্দোলন-সংগ্রাম, এ অঞ্চলের মানুষের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অবশেষে বাস্তবায়ন হতে চলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে এ সেতুটি নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন ওয়াইবিসি জেভি কোম্পানি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে নড়াইল জেলার সীমান্তবর্তী লোহাগড়া উপজেলার কালনা এবং অপরপ্রান্ত গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়ায় মধুমতি নদীর ওপর ৬ লেন বিশিষ্ট ৬শ’ ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৭ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণের কাজ করছে।

এই সেতুর দুই অংশে ৪ দশমিক ২৭৩ কি. মি. সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯শ’ ৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে সেতুর সবগুলো পাইলিং শেষ হয়েছে। ১৩টি স্প্যানের ওপর বসবে ১শ’ ৬০টি পিসি গার্ডার। একটি গার্ডারের ঢালাই শেষ হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ কালনা ঘাটে হচ্ছে।

স্টিলের একটি স্প্যান তৈরি হচ্ছে ভিয়েতনামে। ১২টি পিলারের মধ্যে সাতটির কাজ শেষ হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের মাটির কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতায় এ সেতু নির্মাণ হচ্ছে।

কালনা সেতু নির্মিত হলে যশোরের বেনাপোল স্থল বন্দর-নড়াইলের কালনা সেতু-পদ্মা সেতু-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে। বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্য সরাসরি কালনা এবং পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা কালনা ফেরী ঘাটের দু’পারে আর বসে থেকে জনগণের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। সময় বাঁচবে। কৃষি পরিবহন ও বিপণন সহজ হবে। এক কথায় বৃদ্ধি পাবে দেশের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, পাল্টে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান।

নড়াইল ও সড়ক জনপথ এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এ সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। কালনা সেতু নির্মিত হলে নড়াইল-ঢাকা ১২৭ কিলোমিটার, যশোর-নড়াইল-ঢাকা ১৬১ কলোমিটার, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-নড়াইল-ঢাকা ২০১ কলোমিটার, খুলনা-যশোরের বসুন্দিয়া-নড়াইল-ঢাকা ১৯০ কলোমিটার দূরত্ব হবে।

অর্থাৎ সেতুটি নির্মিত হলে ঢাকার সাথে নড়াইল-যশোর অঞ্চলের দূরত্ব কমবে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। একইভাবে ঢাকার সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর নওয়াপাড়া, খুলনা ও মোংলা বন্দর এবং সাতক্ষীরা ও মাগুরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০টি জেলার দূরত্ব কমবে।

বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ির চালকরা জানান, কালনা ফেরিঘাটে নদী পারাপারের জন্য রয়েছে নামমাত্র ফেরিষেবা। অপ্রতুল ফেরি ব্যবস্থার কারণে প্রয়োজন সত্ত্বেও এ ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন অল্পসংখ্যক গাড়ি পার হতে পারে। প্রায়ই কুয়াশা ও নাব্যতা সংকটে পড়ে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ফলে নদীর উভয় পাড়ে দীর্ঘ জটে পড়ে যানবাহন। তাই বাধ্য হয়েই ঘুরে মাগুরা, ফরিদপুর হয়ে গাড়ি চলাচল করে। এতে বছরে প্রায় দুই কোটি লিটারের বেশি অতিরিক্ত জ্বালানি তেল খরচ হয়। এছাড়া সময় অপচয় হয় ৫-৬ ঘণ্টা।

কালনা সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোমেন কনস্ট্রাকশানের হাইওয়ে প্রকৌশলী মো. জোনায়েদ রাহবার বলেন, আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে।

নির্মাণাধীন এ সেতুর সড়ক ও জনপথের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিপিএম প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন জানান, নির্মাণাধীন কালনা সেতুর ৩৬ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ছয় লেনের এই সেতু হবে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন সেতু।