ফরহাদ মজহারকে অপহরণ মামলার এজাহারে যা আছে

কবি ও লেখক ফরহাদ মজহারকে অপহরণের বিষয়ে তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতার রাজধানীর আদাবর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে গতকাল সোমবার রাতেই তা মামলা হিসেবে এজাহারভুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন।

মামলায় ফরিদা আখতার উল্লেখ করেন, “আমার স্বামী সাধারণত খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগেন এবং লেখালেখি করেন। সকাল ৫টার দিকে আমার ঘুম ভাঙার পর আমি উনাকে লেখার টেবিলে না দেখতে পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি এবং সারা ঘরে খুঁজতে থাকি। ইতোমধ্যে সকাল ৫টা ২৯ মিনিটে আমার স্বামী তাঁর ফোন থেকে আমাকে কল দেন। তিনি ভয়ার্ত কণ্ঠে জানান, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে-মেরে ফেলবে। এরপর ফোনটি কেটে যায়।’ কে বা কারা তাঁকে এভাবে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। বিষয়টি মৌখিকভাবে আদাবর থানায় জানানোর পর পুলিশ তাঁকে উদ্ধারে তৎপর হয়।”

এতে আরো বলা হয়, ‘এরপর ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন থেকে সারা দিনে আরো চারবার ফোন কল আসে। এ সকল ফোনালাপে মজহার জানান, অপহরণকারীরা ৩৫ লক্ষ টাকা চাচ্ছেন। এ টাকা পেলে তারা তাঁকে ছেড়ে দেবেন।’

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি যে, এখন পর্যন্ত ফোন ট্র্যাক করে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি (আজ উদ্ধার হয়েছেন)। ভবনে রক্ষিত সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পাই, ভবনের বাইরে যাবার… এ বিষয়ে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। অতএব, উপরোক্ত বিষয়ে এজাহার গ্রহণপূর্বক ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গত সোমবার রাতে যশোরের নোয়াপাড়া থেকে উদ্ধারের পর সকালে কবি, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক ফরহাদ মজহারকে রাজধানীর আদাবর থানায় নিয়ে আসা হয়।

মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে বেলা পৌনে ৩টায় আদাবর থানার পুলিশ ফরহাদ মজহারকে হাজির করে। পরে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবিবের আদালতে ঘটনার বিবরণ দিয়ে জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন। পরে নিজের জিম্মায় বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেন আদালত। এরপর তাঁকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে সোমবার বিকেলে ফরহাদ মজহারের বন্ধু গৌতম দাস সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গতকাল সোমবার ভোর ৫টার দিকে রিং রোডের ১ নম্বর বাসার সামনে থেকে কে বা কারা ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ‘উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া’র আধা ঘণ্টা পর ফরহাদ মজহারের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্ত্রীর কাছে টেলিফোন আসে। ফোনে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনটি কেটে দেন। এরপর বিষয়টি আদাবর থানার পুলিশকে জানানো হয় বলে জানান গৌতম।