বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি ফিরোজের বাঁচার আকুতি, সাহায্যের আবেদন

হামিদা আক্তার, নীলফামারী থেকে : ফিরোজ রহমান। পঞ্চইন্দ্রিয়ই অনুভূতিহীন। ১৭ বছর বয়সী বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি একটি শিশু। গরীর বাবা-মায়ের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারনে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। ফলে যে বয়সে ফিরোজকে টকবকে এক যুবক হওয়ার কথা ছিলো, সে বয়সে আজ ফিরোজ শিশুই রয়ে গেছে। ১৭ বছর বয়সী এই যুবকটি তার শারীরিক বৃদ্ধি না হওয়ায় শিশু হয়ে বাবা-মায়ের কোলে চড়ে রয়েছে সার্বক্ষনিক। মা-বাবাও নিরুপায় হয়ে পুত্র সন্তানকে ফেলে দিতে না পেরে এক রকম ঘানিই টানছেন ১৭টি বছর ধরে।

বহুমাত্রিক শিশুটির জন্মগত ইতিহাস জানতে গিয়ে তার বাবা-মা জানায়, বহু কষ্টের পরেই আমাদের কোল জুড়ে আলো করে পৃথিবীতে আসে এই পুত্র সন্তানটি। তার জন্ম ২০০০ সালের ৪ঠা জুলাই। জন্মের পরপরেই ভূল করে নাড়ী কাটে তৎকালীণ সময়ে থাকা একজন ধাত্রী। ভূল করে নাড়ী কাটায় এবং সেই ভূলের কারনেই আর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি শিশুটি। নাড়ী কাটতে গিয়ে পেটে সাথে লেগে থাকা মাংস ও কেটে ফেলে ধাত্রী। ফলে সেই ঘা শুকাতে লেগে যায় শিশু ফিরোজের আড়াই বছর। সে থেকে তার বাবা-মা পুত্র সন্তান ফিরোজকে সুস্থ্য করতে ছুটে বেড়িয়েছে শত শত ডাক্তার-কবিরাজের কাছে। ঝাঁড়-ফুক করিয়েছে নানা জনেরও কাছে। কিন্তু না, শিশু ফিরোজ আর ফিরে আসতে পারেনি তার স্বাভাবিক জীবনে। ১৭টি বছর ধরেই প্রতিবন্ধি ফিরোজকে কোলে নিয়েই মা ফিরোজা বেগম করছে সাংসারিক ও চা- স্টলের নানা কাজ। শিশু ফিরোজ ভালো মত খেতেও পারতো না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে বেড়েও উঠতে পারেনি। সামান্য কিছু খেয়েই দিন কাটিয়ে কোন মতে বেঁচে আছে ফিরোজ।

নীলফামারীর ডিমলায় বালাপাড়া ইউনিয়নের রুপাহারা গ্রামের অসুস্থ্য প্রতিবন্ধি ফিরোজের বাবা ওয়াজেদ আলী, মা ফিরোজা বেগম দীর্ঘ ১৭টি বছর ধরে দিনাতিপাত করছে অসুস্থ্য পুত্রকে কোলে নিয়েই। পুত্রকে স্বাভাবিক জীবনে দেখার বাসনায় সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের হাতে তুলে দিয়েছে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু কিছুই হয়নি। সব কিছু হারিয়ে শুধু ভিটে মাটিটুকু সম্বল করে পরিবারটি ডিমলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে চা-স্টলে চলছে তাদের জীবন ও জীবিকা। ফিরোজকে শিশুর মত কোলে নিয়েই প্রতিনিয়ত কাটছে মায়ের জীবন। বর্তমানে শিশুটির চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ নেই বাবা-মায়ের। ফলে প্রতিবন্ধি ফিরোজ ধীরে ধীরে এগিয়ে হচ্ছে মৃত্যুর দিকে।

শিশুটিকে দেখে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপ কুমার রায় জানান, শিশুটি জন্মের পর থেকেই তার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারনে ফিরোজের বৃদ্ধিতে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। ১৭ বছর বয়সী ফিরোজের বাবা-মায়ের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় সঠিক চিকিৎসাও করাতে পারেনি শিশুটির। তবে ভালোভাবে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা গেলে হয়ত ফিরে আসতো ফিরোজের স্বাভাবিক জীবন।

বাবা-মায়ের আকুতি কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি ফিরোজের চিকিৎসায় হাত বাড়িয়ে আর্থিক সহায়তা করতো তহলে হয়ত ফিরোজকে তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনা সম্ভব হত।