বাংলাদেশি যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন ভারতীয় নারীর

ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এক বাংলাদেশিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক ভারতীয় নারী।

জানা যায়, বছর কয়েক আগেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে বসতি গড়ে, উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মেছোভেড়িতে মাছের ব্যবসা করতেন আশিক গাজী। সেখানে ঝুরলি গ্রামের আজমিরা ওরফে মারুফা বিবির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় আশিকের।

সেই সম্পর্ক এক সময় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যার জেরে ৩ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী মারুফা প্রকাশ্যে, ভরা বাজারেই ভোজালি দিয়ে আশিককে কুপিয়ে হত্যা করে। এই সময়

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানা যায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল সাড়ে ৯টা, বসিরহাটের খোলাপোতায় বাজার এলাকায় ভিড়ে ঠাসা। সেখানেই ঘটেছে এমন কাণ্ড, যে জনতা প্রথমে ‘মজা দেখেছিল’ তারাই ওই তরুণী এবং তার সঙ্গে থাকা দুই যুবককে গণধোলাই দিয়ে ঘিরে রেখেছে।

পরে পুলিশ এসে সবাইকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়, গ্রেফতার করা হয় আজমিরা ওরফে মারুফা বিবি, তার স্বামী আরিজুল দফাদার ও এক আত্মীয় আজহারউদ্দিন দফাদারকে। রক্তাক্ত আশিক গাজিকে (৩৪) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

কিন্তু কেন এমন ঘটালেন অভিযুক্ত নারী?, পুলিশের কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন তিনি। ওই নারীর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার ঝুরলি গ্রামে। কর্মসূত্রে স্বামী থাকেন কলকাতায়। কিছু দিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল মেছোভেড়ির কর্মী আশিকের সঙ্গে। কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশ থেকে ওই এলাকাতেই বসতি গড়ে আশিক।

নারীর দাবি, আলাপ-পরিচয়কে নিছক বন্ধুত্বের গণ্ডিতে ধরে রাখতে চায়নি ওই যুবক। কুপ্রস্তাব দিতে থাকে, তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি, পুলিশের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন খুনী। তার শাশুড়িরও একই মত, তার কথায়, ‘আমার ছেলে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকে না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বৌমাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত আশিক। কদিন আগে বাড়িতে ঢুকে অসভ্যতাও করেছিল।’

ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন ওই নারী, যার ফলে মঙ্গলবার নিজে ডেকেই এই কাণ্ড ঘটালেন বলে জানান।

পুলিশ জানায়, এ দিন ফোন করে আশিককে ডেকেছিলেন মারুফা। বছর তিনেকের ছেলেকে কোলে নিয়ে অটোতে উঠে রওনা দেন বাড়ি থেকে। কিছু একটা ‘অঘটন’ ঘটাতে পারেন স্ত্রী, বুঝতে পেরেছিলেন আরিজুলও। তিনি এক আত্মীয়কে নিয়ে পিছু নেন।

বসিরহাটের খোলাপোতার রাস্তায় আশিকের বাইক থামতেই পেছনে এসে অটো থেকে নামেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিন বছরের ছেলেকে কোনো রকমে কোলে আঁকড়ে ধরে যুবকের গালে সজোরে চড় মারছিলেন ওই নারী। ‘আমার বাচ্চাটাকে একটু ধরুন তো’— মুখের কথা শেষ হতে না হতেই পাশের এক নারীর কোলে ধরিয়ে দেন ছেলেকে। ততক্ষণে ভিড় জমে গিয়েছে আশেপাশে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোমর থেকে ভোজালি বার করে সামনের যুবকের গলায় চালিয়ে দেন তিনি।

এরপরে একের পর এক কোপ বসাতে থাকেন। এতক্ষণে ভীড় করা জনতা দৌড়ে এসে তাকে আর সঙ্গে থাকা দুজনকে মারধর করতে থাকে। পুলিশ এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যায়, সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন নারী। বলেন, ‘এ ছাড়া আমার আর উপায় ছিল না। আমি সংসার ছেড়ে ওর সঙ্গে বেরিয়ে না গেলে স্বামী-সন্তানকে খুন করবে বলেছিল আশিক। হয় ওকে মরতে হত, না হয় আমাকে!’