বাংলাদেশ-মিয়ানমার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বৈঠক শুরু

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং প্রত্যাবাসনের শর্তাবলি (টার্মস অব রেফারেন্স-টিওআর) নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ঢাকায় শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় সকাল ৮টায় দু’দিনব্যাপী এ বৈঠক শুরু হয়েছে।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান।

পররাষ্ট্র সূত্র জানিয়েছে, তাদের এই সফরেই গঠন হবে দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির স্থায়ী সচিব মিন্ট থিউ।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের প্রশাসনিক রাজধানী নেপিদোতে একটি অ্যারেঞ্জমেন্ট সই হয়। তার আলোকে তিন সপ্তাহের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো শুরু হওয়ার কথা। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া তদারকি করবে।
আজ বৈঠকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে। পাশাপাশি ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হবে। ফলে এ বৈঠককে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও একই ধরনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে বৈঠকে এ বিষয়ে একটি ঘোষণা দেয়া হতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বাংলাদেশ পক্ষের প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক এ বিষয়ে বলেন, যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ম্যান্ডেট সম্পর্কে অ্যারেঞ্জমেন্টে উল্লেখ রয়েছে। রোহিঙ্গা ফেরত পাঠাতে কোনো সমস্যা হলে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ সময় সময় দেখা করবে। তারা এসব সমস্যার নিষ্পত্তি করবে।

সূত্র মতে, রোহিঙ্গাদের কী নামে ডাকা হবে, এ নিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থান হল, দুই দেশের সই হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্টে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী বলা হয়েছে। ফলে এটাই হবে তাদের পরিচয়।

সূত্রটি আরও জানায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কৌশল নির্ধারণে অতীতের অভিজ্ঞতা, তাদের প্রত্যাবাসন কীভাবে হবে, তাদের কোথায় রাখা হবে, তাদের কী ধরনের মর্যাদা দেয়া হবে, এসবই উল্লেখ থাকবে। মিয়ানমারের অবস্থান হল, রোহিঙ্গাদের তাদের কাছে দেয়া হবে এবং মিয়ানমার তাদের নিয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থান হল প্রত্যাবাসন প্লাস। অর্থাৎ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নেয়ার পর তাদের নিরাপত্তা কী হবে, তাদের নাগরিকত্বসহ অপরাপর মর্যাদা কী দেয়া হবে, তার সবই স্পষ্টত জানতে চাইবে বাংলাদেশ। কেননা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া অ্যারেঞ্জমেন্টে কফি আনান কমিশন বাস্তবায়ন করতে উভয়পক্ষ একমত বলে জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে খুঁটিনাটি নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার রেকর্ড কোথায় রাখা হবে, ইউএনএইচসিআর কী ভূমিকা রাখবে- এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

২৫ আগস্ট মিয়ানমারের নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। তারা রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলমানদের হত্যা, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ এবং তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় উগ্র বৌদ্ধ গোষ্ঠীগুলো। চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক গ্রুপ ‘মেডিসিন সান ফ্রন্টিয়ার্স’ (এমএসএফ) এক জরিপ রিপোর্টে বলেছে, প্রথম মাসেই ৬ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগের রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হয়। তার ফলেই দুই দেশ অ্যারেঞ্জমেন্ট সই করে।