বিচার চেয়ে মন্ত্রীর কাছে গিয়েও সাড়া পাননি প্রিয়া সাহা : রানা দাশগুপ্ত

পিরোজপুরে পৈত্রিক বাড়িতে হামলা ও আগুনের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রিয়া সাহা স্থানীয় সাংসদ ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের কাছে গেলে তিনি ওই বিষয়ে অনীহা দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে প্রিয়া সাহার সাক্ষাৎ ও অভিযোগ’ বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ করার পর প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পুরো জাতিকে আশ্বস্ত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন রানা দাশগুপ্ত।

ওই ঘটনার পর প্রিয়া সাহাকে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য তাকে বহিষ্কারের কথা সে সময় জানিয়েছিলেন সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

সে বিষয়ে তিনি বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রিয়া সাহার পরিচয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ হওয়ায় বিভ্রান্ত্রির সৃষ্টির কারণে তাকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রিয়া সাহার পৈত্রিক বাড়ি যে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এটি সত্য। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সংবাদ যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। এরপর কয়েক দিন আগে দেখলাম প্রিয়া সাহা এ ঘটনায় বিচার চেয়েছিল কি না বলে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি বিচার চেয়েছিলেন।

পৈত্রিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার বিচারের চেয়ে প্রিয়া সাহা সরকারের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে যান জানিয়ে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমার সামনেই শহীদ মিনারে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এস এম রেজাউল করিম, তিনি ওই এলাকার সাংসদ, তার কাছে বিচার চেয়েছিলেন। কিন্তু রেজাউল করিম সাহেব সম্মানজনকভাবে তার সাথে কোনো কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এগুলো আমার চোখের সামনে হয়েছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ব্যক্তির যদি ঘর-বাড়ি জ্বলে থাকে, তাও আবার মানবাধিকারকর্মী প্রিয়া সাহার পৈত্রিক বাড়ি, সাধারণ হিন্দুদের কথা বাদই দেন, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের কথা বাদ দেন। আপনারা নিজেদের (সাংবাদিক) কথা বিবেচনা করেন, আপনাদের বাড়ি-ঘর যদি জ্বালিয়ে দেওয়া হত, বিচার চাওয়ার পরও কোথাও বিচারের মুখোমুখি না হয়, আপনাদের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হত কি না?

তিনি বলেন, ট্রাম্পের কাছে কী বলেছেন এটা আমাদের বিচার্য নয়। ক্ষোভ থেকে বলেছেন কি না সেটাও আমরা জানি না। তবে এ কথা ঠিক ব্যক্তিত্বে ক্ষোভ হতেই পারে।

আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম, বিচার চাইলাম, মামলা করলাম, কিন্ত কেউ নাই! বরং উল্টো কথা, প্রিয়া সাহা নাকি নিজের বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন, এটা হয়? যোগ করেন রানা দাশগুপ্ত।

উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ রাতে পিরোজপুরের নাজিরপুরে প্রিয়া সাহার পৈত্রিক বাড়িতে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেন শতাধিক মানুষ। ভাংচুর-লুটপাটের পর ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে প্রিয়া সাহার স্বজনদের অভিযোগ।

এ ঘটনার পর ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। মামলায় কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও হামলার ঘটনায় পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই ছিলেন।

এবিষয়ে মন্ত্রী রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রিয়া বালার পৈত্রিক বাড়ি আমার ইউনিয়নে। তার বড় ভাই আমার বন্ধু। একটি পরিত্যক্ত ঘর পোড়াকে ঘিরে থানায় মামলা দায়ের করেন প্রিয়া বালার ভাইয়ের কেয়ারটেকার। সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। অন্য ধর্মবালম্বীদের অভিযুক্ত বা সন্দেহ করা হয়নি। তদন্তে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।