বিমানে যা ঘটলো তার কী মূল্য দেবে বাংলাদেশ?

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী দাবি করেছেন যে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো গলদ ছিলোনা এবং এখনো নেই।

যদিও একটি টেলিকম কোম্পানির পদস্থ কর্মকর্তা শারমীন সুলতান, যিনি নিয়মিতই ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন, বলছিলেন বিমানবন্দরে প্রবেশের পর থেকে উড়োজাহাজে উঠার আগ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই নিরাপত্তা কার্যক্রমে পেশাদারিত্বের অভাব আছে এবং অনেক সময় দেখা যায় পদস্থ বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে যাত্রী নন এমন ব্যক্তিরাও বোর্ডিং লাউঞ্জ পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, “এয়ারপোর্টে যারা স্ক্যানিং করে তাদের আমার সিরিয়াস মনে হয়না। অনেক সময় গল্প করছেন। অনেক সময় নিজের আসনেও তারা বসেন না। স্ক্যানিং মেশিনের কাছে জটলা লেগেই থাকে। শুরু থেকে একেবারে উড়োজাহাজে ওঠা পর্যন্ত সব জায়গায় যারা নিরাপত্তা তল্লাশির কাজে থাকেন- তারা কিভাবে কাজ করছে, কথা বলছে এবং আউটলুক- কোনো কিছুতেই তাদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আমার চোখে পড়েনি”।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার হাসান মাসুদ বলছেন, বিমানবন্দরের ভেতরের লোকজনই এসব অনিয়মের সাথে জড়িত যেটি পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকেই মাঝে মধ্যে ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, “যেখানে একটা নেইলকাটার পর্যন্ত নেয়া যায় না সেখানে কিভাবে পিস্তল গেলো? খেলনা পিস্তলও তো পিস্তল। যেটায় শব্দ হয় সেটায় লোহা ছিলো। কিভাবে গেলো। ভেতরের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।”

ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপঙ্খী উড়োজাহাজটিতে নিয়ে সংঘটিত ঘটনার জের ধরে কমান্ডো অভিযানে একজন যাত্রী পলাশ আহমেদের নিহত হবার পর আবারো আলোচনায় এসেছে ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি। মিস্টার মাসুদ বলছেন এসব ঘটনার সুদূরপ্রসারী ফল দেশের জন্য ভালো হবেনা।

তিনি বলেন, “একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ রেটিংয়ে ভালো করেছিলো। কিন্তু এরপর যখন এসব কথা আসবে তখন এটা কিন্তু সিরিয়াসলি নেবে মানুষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এটা হজম করতে হবে এসব ব্যর্থতার জন্য”।

যদি ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এর আগেও বারবার আলোচনায় এসেছে। এমনকি কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে এ বিমানবন্দরের। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল অভিযোগ তুলে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যও। পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে গেছে একটি ব্রিটিশ কোম্পানিও।

পাইলট এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি নাসিম উল হক বলছেন নিরাপত্তা সংকট থাকলে সেটিই বিমানবন্দরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই সংকট তৈরি করে।

তিনি বলেন, “এয়ারপোর্ট এর যে অ্যাবিলিটি তার যে গ্রেড সেটা কমে যায়। বাংলাদেশে বারবার এসব যখন ঘটছে তখন গ্রহণযোগ্যতা সংকট তৈরি করে। এগুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা উঠে”।

বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড: এম এ মোমেনের মতে, কোনো উড়োজাহাজে কোনো একজন যাত্রীকে নিয়ে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো একজন অস্ত্র হাতে একজন ব্যক্তির উড়োজাহাজ পর্যন্ত চলে যাওয়া।

“এখন পর্যন্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিমানের হাতে। সিবিএ সহ নানা চাপের কারণে এটা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এটা ইমেজের জন্য ক্ষতিকর। যারা এয়ার ওয়াচ করে তারা হয়তো শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখবে। কিন্তু তারপরেও নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত”।

যদিও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সোমবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকার একদল সাংবাদিকদের ঢাকা বিমানবন্দরের লাগেজ স্ক্যানিং থেকে শুরু করে উড়োজাহাজে ওঠা পর্যন্ত সবগুলো স্তরে কিভাবে নিরাপত্তা তল্লাশি করানো হয় সেটি দেখিয়ে দাবি করেছেন যে বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় কোনো গড়মিল ছিলোনা এবং উড়োজাহাজে নিহত পলাশ আহমেদ উঠেছিলেন খেলনা পিস্তল নিয়ে।

ওই ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির সদস্যদের সোমবার চট্টগ্রাম যাওয়া ও পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।