বৃষ্টিতে বিপাকে মানুষ

‘সক্কাল বেলা যারাই হাটতে আহে তাগো দুই একজন ছাড়া সবাই ডাব খায় (ডাবের পানি)। এই সময়ের মধ্যে ৭০/৮০টা ডাব বেচা অইয়া যাইতো। কিন্তু মরার বৃষ্টির কারণে মাত্র দুইডা ডাব বেচছি। সারাদিনডা কেমন বেচাকেনা অইবো আল্লাহই জানে।’

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি সংলগ্ন গেটের অদূরে দাঁড়িয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ডাব বিক্রেতা শমসের আলী। গতকাল ও আজ (রোববার) সাতসকালে বৃষ্টির কারণে প্রাতঃভ্রমণকারী নিয়মিত ক্রেতারা না আসায় তার এ ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপে গতকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। অগ্রহায়ণে এমন বৃষ্টিতে শুধু শমসের আলী নন, তার মতো নিম্নআয়সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিপাকে পড়েছেন।

সরজমিনে লালবাগ, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তবে জীবিকার তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়ে নিম্নআয়ের মানুষগুলো কাকভেজা হয়েছেন। চাকরি বা ব্যবসার কাজে ছাতা মাথায় বের হয়েছেন অনেকেই। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন রিকশার খোঁজে।

আজিমপুর বাস স্ট্যান্ডের অদূরে দাঁড়িয়েছিলেন দিনমজুর আবদুস সোবহান। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আবহাওয়া ভালো থাকলে কাজ পাই। এ মাসের ১০ দিনের মধ্যে মাত্র ৬ দিন কাজ করছি। তার ভাষায়, ‘কাম না থাকলেও না খাইয়া তো থাকন যায় না। তাছাড়া গ্রামে বউ-পোলাপাইনের লাইগ্যাও টাকা পাডাইতে অয়।’

এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর চিরচেনা যানজট। দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত যানবাহনে ওঠতে পারলেও তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পরতে হয়েছে অফিসগামী মানুষদের। মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বেসরকারি কর্মকর্তা আসিফ জানান, বৃষ্টি ভেজা ভোরে ছাতা মাথায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত বাস পেলেও বিপত্তি ঘটে যানজটে। এমনিতে ভাঙা রাস্তায় যানজট লেগেই থাকে, এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে যেন চলাই দায়।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গতরাত থেকে রাজধানীতে ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে রাজধানীসহ সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে আগামীকাল (সোমবার) নাগাদ বৃষ্টির পরিমাণ কমে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।

তিনি আরও জানান, আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসলে রাজধানীতে ধীরে ধীরে শীত নামবে। এছাড়া এ মাসের শেষের দিকে সারাদেশে শৈত্যপ্রবাহ নামতে পারে। প্রথমত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ধীরে ধীরে তীব্র হবে, যা প্রায় সপ্তাহ খানেক অব্যাহত থাকবে।