বেরোবি’র উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ : দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস

বেরোবি প্রতিনিধি : প্রায় দুই মাস থেকে বন্ধ রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য ড. এ কে এম নূর-উন-নবী আমলের টেন্ডার দেওয়া বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন স্থাপনার কাজ ।কয়েক মাস ধরে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ না করায় স্থাপনা চারটির কাজ বন্ধ রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।তবে বিল ও কাজের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর অনিয়ম থাকায় তা কমিটির মাধ্যমে খতিয়ে দেখে যতদ্রুত সম্ভব বিল পরিশোধ করা এবং দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (সিভিল) মো. শরীফ হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, বিল পরিশোধ না করার কারণে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন গ্যারেজ স্থাপণের জন্য সাবেক উপাচার্য’র আমলে আনোয়ার ট্রেডার্স প্রায় ৮০ লাখ টাকার টেন্ডারের কাজ পায়।যার প্রতিনিধি হিসেবে কাজের দেখাশোনা করছে রংপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদ।বাকী তিনটির মধ্যে স্বাধীনতা স্মারকের প্রথম দিকের কাজের জন্য জনতা ব্যাংক ২০ লাখ টাকা অনুদান দেয় এবং অবশিষ্ট কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজের জন্য এক কোটি ১৬ লাখ (প্রায়)টাকার টেন্ডার পায় আনোয়ার ট্রেডার্স।বড় দুটি বাজেটের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠার জন্য ২৫ কোটি ২৭ লাখ (প্রায়) টাকার টেন্ডার পায় ফরিদপুরের হাবিব এন্ড কোম্পানি এবং জেবি আব্দুছ ছালাম ।

ছাত্রীদের হল ( শেখ হাসিনা) নির্মাণে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার (প্রায়) টেন্ডার পায় জেবি আব্দুছ ছালাম, ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন এবং হাবিব এন্ড কোম্পানি।ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিউট এবং ছাত্রীদের হল ২০১৬ সালের ৪ জানুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর উদ্ভোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুটি প্রকল্পের কাজের সময়সীমা নির্ধারিত ছিলো ১৮ মাস।ইতোমধ্যে প্রকল্প নির্মাণের কাজের সময়সীমা পার হলেও কাজ হয়নি ৫০ শতাংশও।স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজের সময় দুই বছর পেড়িয়ে গেলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি সেটির।পরিবহন গ্যারেজ ও স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজ ৭০ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি করেন জুয়েল আহমেদ।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থাপনার কাজের টেন্ডার হয়েছে সাবেক উপাচার্য ড. এ কে এম নূর-উন-নবী’র আমলে।সে সময় উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন উপাচার্য নিজেই এবং কাজের পরিকল্পনা, দেখাশোনা করতেন নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম।বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ নামের একটি দপ্তর থাকলেও উপাচার্য ও নির্বাহী প্রকৌশলী মিলেই সকল ধরণের পরিকল্পনা ও কাজ করতেন।উপ-প্রধান প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলী পদ থাকলেও তা নিয়োগ দেননি উপাচার্য ড. একে এম নুর-উন-নবী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চারটি কাজের স্থাপনার জন্য ঠিকাদারের বিল পরিশোধ না করায় তারা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।ঠিকাদাররা ছয়মাস আগে বিল সাবমিট করলেও তা অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রদান করা হয়নি। বিল পরিশোধ না করার কারণ জানতে চাইলে প্রকৌশল দপ্তরের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শরীফ হোসাইন পাটোয়ারি জানান, আমরা বিলের কাগজ ঠিকঠাক করে নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট পাঠিয়েছি।তবে কী কারণে এখনও বিল পরিশোধ করা হয়নি সে ব্যাপারে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী ( সাময়িক বরখাস্ত) জাহাঙ্গীর আলমের কাছে কল করলে তিনি রিসিভ করেন নি।

পরিবহন গ্যারেজ ও স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজের প্রতিনিধি জুয়েল আহমেদ বলেন, দুটি স্থাপনার কাজের ঠিকাদার তিনি।প্রায় দুই কোটি টাকার টেন্ডারের কাজে এখন পর্যন্ত মাত্র তাকে বেশ কিছু (আট ভাগের এক ভাগ) পরিশোধ করা হয়েছে।বিল পরিশোধের ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বারবার কল করলেও তিনি ধরেন না এবং প্রশাসনও গুরুত্ব দিচ্ছেনা বলে তিনি অভিযোগ করেন।তিনি দাবি করেন, পরিবহন গ্যারেজের কাজ ৭০ ভাগ সম্পন্ন হলেও টাকার অভাবে কাজ করতে পারছেন না।

বিষয়টি জানতে উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে কল করলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর বলেন, উপাচার্য স্যারের কাছে বিলের প্রতি সন্দেহ থাকায় তা যাচাই-বাছাই না করে পরিশোধ করবেন না বলে জানিয়েছেন।বিলগুলো যাচাই বাছাই করে অতি তাড়াতাড়ি পরিশোধ করে দেওয়া হবে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কার্স কমিটি কাজ শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো স্থাপনার জন্য ওয়ার্কার্স কমিটি কোনো কাজ করে নি এবং একটি সভাও হয়নি। বর্তমানে তা সচল করা হয়েছে এবং কাজ শুরু করেছে বলেও তিনি জানান।