ভারত সম্পর্কে বিএনপি যা বলেছে তা মোটেও ঠিক নয় :বীণা সিক্রি

বাংলাদেশের নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। নিকটতম প্রতিবেশী হিসেবে আমরা, ভারত খুব আশাবাদী ছিলাম। আমরা বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করেছিলাম। শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি যেভাবে তা ঠেকাতে চেয়েছিল, সহিংসতা হচ্ছিল, তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ ছিল। এমনকি গতকাল রবিবার ভোটের দিন বিএনপি জনগণকে ভোটে না যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিল। আমি মনে করি, সার্বিকভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও ভালো হয়েছে। আর এর ফলাফলে শেখ হাসিনার আবারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে।

ভারতের কাছে শেখ হাসিনার আবার ক্ষমতায় ফেরার অর্থ একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ধারাবাহিকতা। একই সঙ্গে তা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক, সহযোগিতা—সব ক্ষেত্রেই অনেক এগিয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের একসঙ্গে কাজ করার অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। আমরা আগামীতে এই সম্পর্কের আরো অগ্রগতি দেখব বলে আশা করতে পারি। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে আমরা ভালো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ধারাবাহিকতা দেখতে পারি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রত্যাশায় থাকব।

আমি আবারও বলব, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করছে না। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল, সব শ্রেণির ওপরই আমাদের দৃষ্টি ছিল। নির্বাচনে কী হবে, তা বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত। এবারের নির্বাচনের আগে বিএনপি বলেছে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর আগের নির্বাচনে বিএনপি বলেছিল, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো ফ্যাক্টর নয়। তারা সব সময় এমনটি বলেছে। তবে এবারের নির্বাচনের আগে বিএনপি ভারত সম্পর্কে যা বলেছে এবং যেভাবে ভারতবিরোধী মনোভাব জানানোর প্রয়াস চালিয়েছে, তা মোটেও ঠিক নয়।

আমরা চাই, বাংলাদেশ স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হোক। আমরা জানি, বাংলাদেশের জনগণও গণতন্ত্র ভালোবাসে। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না, এটি বিএনপির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারত। বিএনপি বলতে পারে না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন বাংলাদেশের আদালত। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বিষয়ে বাংলাদেশই সিদ্ধান্ত নেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যা করছে, তা আরো বেশ কিছু দেশের সঙ্গেও করছে। নির্বাচন হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমস্যাগুলো নিয়ে ভালো ও অর্থবহ আলোচনা হওয়া উচিত।

 

 লেখক : বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার