‘ভারী বর্ষণ হলেও দেশে বড় বন্যার আশঙ্কা নেই’

আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণ হলেও দেশে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। তবে তা হবে সাময়িক সময়ের জন্য।

এছাড়া হাওর অঞ্চলের বোরো ধান কাটা প্রায় হয়ে গেছে, ছোট বন্যা হলেও সেখানে ক্ষয়ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।

সোমবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক পূর্বাভাস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও নদ-নদীর পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও শেরপুরের (আংশিক) জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া সোমবার বলেন, ‘আগামী ৭২ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের কিছু অংশ জুড়ে এই বৃষ্টিপাত হবে। এই তিন দিনে নদ-নদীর পানিগুলো দ্রুত বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘হাওড়ের নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ২ থেকে ৪ মিটার নিচে রয়েছে। সেখানের পানির একটা র‌্যাপিড রাইজ (দ্রুত বৃদ্ধি) হবে কিন্তু বিপদসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনা কম। কোথাও কোথাও হয়তো সামান্য সময়ের জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করতেও পারে। এতে সামান্য সময়ের জন্য আকস্মিক বন্যাও হতে পারে।’

‘মৌলভীবাজারের কিছু নদী ও নেত্রকোনার কংশ নদীর পানি সামান্য সময়ের জন্য বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু এটা ক্ষণস্থায়ী।’

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে কালনী নদীর পানি বিপদসীমা স্পর্শ করে তা আবার কমেও গেছে। বৃষ্টির কারণে এই নদীর পানি হয়তো আবার বাড়তে পারে। কিন্তু এতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা করছি না।’

‘এবারের এই বৃষ্টি বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে ও আশপাশে হবে। খুব বেশি উজানে হবে না। তাই বৃষ্টির পানিটা খুব দ্রুতই আবার নিচের দিকে নেমে যাবে’ বলেন আরিফুজ্জামান।

বড় ধরনের বন্যা কিংবা বন্যায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা সুনাগঞ্জের হাওরাঞ্চল ঘুরে এসেছি। বেশ কিছু জায়গায় গিয়েছি। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বলতে বোঝায় ফসলহানি। আমরা দেখেছি হাওরাঞ্চলের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভারী বৃষ্টির এই পূর্বাভাস আগেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, পাকা ধান থাকলে তা যেন দ্রুত কেটে ফেলা হয়। তারা সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছে, এই তিন-চার দিনে অনেক ধান কাটা হয়ে গেছে। সামান্য কিছু ধান এখনও আছে, তবে সেটা খুব বেশি ক্ষতির কারণ হবে না বলে মনে করছি।’

বজ্র মেঘ বেড়ে যাওয়ার কারণে রোববার (২৯ এপ্রিল) থেকে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবারও বৃষ্টি হচ্ছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টির পূর্বাভাসও ইতোমধ্যে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

মঙ্গল ও বুধবারও ঝড়-বৃষ্টির এই প্রবণতা থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।