ভ্যান চালাচ্ছে ছেলে মাইকিং করছেন মা

হতদরিদ্র নাদিরা বেগম। উচ্চমাধ্যমিক পাস করা এই নারী পেশায় গৃহিণী। আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী।

ওই ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন আরও ছয়জন। ভোটের মাঠে দলবেঁধে ঘুরছেন সবাই। কিন্তু ভিন্ন চিত্র নাদিরা বেগমের। কেবল একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে চালাচ্ছেন ভোটের প্রচারণা। বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামীকে হারান নাদিরা। সেই থেকে একাই পথচলা তার।

নাদিরা বেগম নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার মকবুল হোসেনের মেয়ে। তার একমাত্র ছেলে শাহারিয়ার আহমেদ স্বপ্নীল নগরীর ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র মডেল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মাত্র ৬০ হাজার টাকা নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছেন নাদিরা। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা বোনের কাছ থেকে ধার নিয়েছেন। পোষা রাজহাঁস বিক্রি করে বাকি টাকা জোগাড় করেছেন তিনি।

স্থাবর সম্পত্তি বলতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৮ শতাংশ জমি রয়েছে তার। নগদ ৬০ হাজার টাকা ছাড়াও তার ফ্যান, মোবাইল এবং দুটি খাট রয়েছে অস্থাবর সম্পত্তির ঘরে। প্রতি মাসে গড়ে তিন হাজার টাকা করে আয় করেন জীবন সংগ্রামী এই নারী।

ভোটের মাঠে নাদিরা বেগমের কোনো নেতাকর্মী কিংবা লোকবল নেই। নেই তেমন অর্থ-কড়ি। তাই বলে থেমে নেই তার প্রচারণা। ছেলেকে নিয়ে নিজেই নেমে পড়েছেন ভোটের মাঠে। কখনও রিকশা আবার ভ্যান চেপে নিজেই মাইকিং করছেন নাদিরা। পাশাপাশি পোস্টার টাঙাচ্ছেন নিজ হাতে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দরজায় দরজায় কড়া নাড়ছেন এই প্রার্থী। মানুষের পাশে থেকে সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিপগাড়ি প্রতীকে চাইছেন ভোট।

জানা গেছে, গত তিন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়েছেন নাদিরা বেগম। কিন্তু একবারও নির্বাচিত হতে পারেননি। প্রতিবারই অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। এ ব্যবধান গড়ে দিয়েছে টাকা।

এবারের নির্বাচন নিয়ে কথা হয় নাদিরা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অর্থের অভাবে ভালোভাবে প্রচারণায় নামতে পারি না। কিন্তু বরাবরই এলাকার মানুষের সমর্থন পেয়েছি। এবার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমি। তবে অন্য প্রার্থীদের অর্থের কাছে আমাকে গত নির্বাচনগুলোতে হারতে হয়েছে। তাই এবারও আশার পাশাপাশি শঙ্কাও রয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে এলাকার উন্নয়নে একযোগে কাজ করব। বিশেষ করে অসহায়-দুস্থ, নারী ও শিশুদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখব। এলাকার যুব-সম্প্রদায়ের জন্য কর্মস্থানের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতসহ এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমৃদ্ধ ওয়ার্ড গড়ে তুলব।