মার্চে উৎপাদনে আসছে দেশের প্রথম বেসরকারি টিএসপি সার প্লান্ট

দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সুসংবাদ নিয়ে আসছে মোনার্ক ও রুট গ্রুপ। দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে গড়ে তুলেছে দেশের প্রথম ও একমাত্র বেসরকারি টিএসপি সার প্লান্ট গ্রাম বাংলা এনপিকে ফার্টিলাইজার অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (প্রা.) লিমিটেড। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মার্চে উৎপাদনে আসবে যৌথ এই প্রকল্প।

প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে SUMEC Complete Equipments and Engineering Co. Ltd. China কর্তৃক বাস্তবায়ন, ডিজাইন এবং ড্রয়িং তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, ইউরোপ ও চীন থেকে মূল মেশিনারিজ আমদানি করে চীনা বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী দলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রকল্প যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন, সংযোজনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

জানা গেছে, আগামী ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে সক্ষম হবে। প্রকল্পটি টিএসপি সার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতীয় গ্রিড থেকে কোনও প্রকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হবে না। প্রকল্পের উৎপাদিত বাই প্রডাক্ট বিদ্যুৎ দ্বারা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটির উৎপাদিত পণ্য উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ এবং পরিবহনের জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানার চরচাষী এলাকায় স্থাপিত এ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্জাকুল হোসেন। কারখানাটিতে প্রধান পণ্য হিসেবে উৎপাদিত হবে: (ক) টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার এবং (খ) এনপিকেএস (মিশ্র) সার।

উপজাত পণ্য (বাইপ্রডাক্ট): (ক) ফসফরিক এসিড, (খ) সালফিউরিক এসিড, (গ) জিপসাম ও (ঘ) বিদ্যুৎ।

বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা: উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ: (ক) টিএসপি সার-১,০০,০০০ মেট্রিক টন ও (খ) এনপিকেএস সার-৫০,০০০ মেট্রিক টন।

উপজাত পণ্য (বাই-প্রডাক্ট): (ক) সালফিউরিক এসিড-৩,৩৫,০০০ মেট্রিক টন, (খ) ফসফরিক এসিড -১,১৭,৫০০ মেট্রিক টন, (গ) জিপসাম-১,৫০,০০০ মেট্রিক টন এবং (ঘ) বিদ্যুৎ-৮ মেগাওয়াট।

বাৎসরিক বিক্রয়ের পরিমাণ: প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার কৃষি মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে প্রায় ৯,০০,০০০ মেট্রিক টন টিএসপি সার বিদেশ থেকে বিএডিসি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করে থাকে। আমদানিকৃত সার সরকার ভর্তুকি দিয়ে সরকারের অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে দেশের কৃষকদের মধ্যে বিক্রয় ও বিতরণ করা হয়।

বিসিআইসি এর আওতাভুক্ত একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান টিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রামের বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৫০,০০০ মেট্রিক টন টিএসপি সার, যা দেশের মোট চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

সরকার ওই সার ভর্তুকির আওতায় ক্রয় পূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত ডিলার দ্বারা কৃষকের নিকট সরবরাহ ও বিতরণ করে থাকে। অবশিষ্ট টিএসপি সারসহ অন্যান্য সার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ভর্তুকির আওতায় আমদানি করে দেশের কৃষকদের চাহিদা পূরণ করা হয়।

এ ক্ষেত্রে সরকার পিএসপি কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম হতে ক্রয়কৃত সার এবং বেসরকারীভাবে আমদানিকৃত সারের বিপরীতে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। অর্থ্যাৎ সরকার উভয় ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে।

সেক্ষেত্রে কারখানাটিতে উৎপাদিত সারের গুণগত মান আমদানিকৃত টিএসপি সারের তুলনায় সমমান ও উন্নত হলে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানটিকেও সরকারের ভর্তুকির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে উৎপাদনে যেতে পারলে দেশের কৃষকদের টিএসপি সারের চাহিদা সঠিক সময়ে মেটানোসহ আমদানি ব্যয় হ্রাস এবং প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। দেশে প্রচুর কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ প্রকল্পের উৎপাদিত টিএসপি সার এর গুণগত মান আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এবং সরকার কর্তৃক মানদণ্ড বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন তারা। দেশের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ পুরণ করতে পারবে এই প্রকল্প। এছাড়াও দেশের সালফিউরিক এসিডের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।

এ বিষয়ে কোম্পানির ব্যস্থাপনা পরিচালক রাজ্জাকুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সারা বিশ্ব এখন কঠিন সময় পার করছে। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। এমন সময়ে বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে আসছি আমরা। আমাদের এই প্রকল্প দেশের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আমাদের এই প্রকল্প দেশের টিএসপি সারের ১২ শতাংশ চাহিদা পূরণ করবে।
সৌজন্যে: বাণিজ্য প্রতিদিন