মালদ্বীপ সঙ্কট : সরকার রক্ষার শপথ নিল সেনাবাহিনী, ২ এমপি গ্রেফতার

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এক আদেশের জেরে গভীর রাজনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে। রোববার সকালের দিকে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সুপ্রিম কোর্টে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আনার পর এ সঙ্কট আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

সকালের দিকে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী মালেতে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করার পর দখলে নিয়েছে।

রোববার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বিরল ভাষণে তিনি যখন এসব কথা বলেন তখন তার দুই পাশে ছিলেন দেশটির সেনাবাহিনী ও পুলিশের দুই প্রধান। প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিনকে অভিশংসনের চেষ্টা নিরাপত্তাবাহিনী সফল হতে দেবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি। তার এ ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা পার্লামেন্ট ভবন সিলগালা করে দিয়েছে।

৮৫ আসনবিশিষ্ট মালদ্বীপের পার্লামেন্টে বিরোধীদলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। গত বছর দেশটির ক্ষমতাসীন দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় পার্লামেন্টের ১২ সদস্যের পদ বাতিল করা হয়। পরে পুনরায় তাদের স্বপদে বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।

মালদ্বীপের প্রধান বিচারপতি আব্দুল্লা সাইদ ও বিচারপতি আল হামিদ মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ঘুষের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানানোর পর তিনি টেলিভিশনে ভাষণ দেন। রোববার দেশটির চিফ জুডিশিয়াল প্রশাসককে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে, স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ অনিল ও প্রধান প্রসিকিউটরের ওপর আস্থা নেই বলে তাদের পদত্যাগের দাবিতে সংসদ সচিবালয়ে পিটিশন দিয়েছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যরা। দেশটির বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লা শহীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, বিদেশ থেকে মালদ্বীপে ফেরার পরপরই রাজধানী মালের বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়েছেন আব্দুল্লা সিনান ও ইহাম আহমেদ নামের দুই সংসদ সদস্য। পুলিশ বলছে, আদালতের নির্দেশেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ফারিশ মামুন ঘুষ কেলেঙ্কারি মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, রাজধানী মালেতে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল আহমেদ শিয়াম সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের শপথ পড়িয়েছেন। দুই বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈধ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত আছেন তারা।

সেনা ও পুলিশের কর্মকর্তাদের এ শপথ অনুষ্ঠান স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে কারাবন্দি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ বেশ কয়েকজন বিরোধীদলীয় নেতাকে মুক্তি দিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশ সরকার বাস্তবায়ন না করায় মালদ্বীপে এ রাজনৈতিক সঙ্কটের সূত্রপাত হয়।

সূত্র : মালদ্বীপ ইন্ডিপেনডেন্ট, আলজাজিরা।