মা-বাবা সন্তানের জন্য উভয় জগতের সম্পদ

সুসন্তান মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। সুসন্তানের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার মা-বাবার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানের মুকুট পরিয়ে দেন। দুনিয়াতে সন্তানের কৃতিত্বের কারণেও মানুষ তার মা-বাবাকে শ্রদ্ধা করে।

তার মা-বাবার সামাজিক অবস্থান উন্নত করে। সন্তানের সফলতাগুলো মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করে। তাদের চক্ষু ও মন শীতল করে। সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে শেষ বয়সে মা-বাবাকে কষ্ট করতে হয় না। এমনকি সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে যেতে পারলে পরকালেও মা-বাবাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাদের পরকালীন জীবনও শান্তিময় হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা অনুযায়ী আমল করে, কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতাকে এমন মুকুট পরানো হবে, যার আলো সূর্যের আলোর চেয়েও উজ্জ্বল হবে। ধরে নাও, যদি সূর্য তোমাদের ঘরে বিদ্যমান থাকে (তাহলে তার আলো কিরূপ হবে?)। তাহলে যে ব্যক্তি কোরআন অনুযায়ী আমল করে তার ব্যাপারটি কেমন হবে, তোমরা ধারণা করো তো!’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৫৩)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর কবরে সাতটি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইলম শিক্ষা দিল, ২. যে পানি প্রবাহিত করল, ৩. কূপ খনন করল, ৪. খেজুরগাছ লাগাল (গাছ রোপণ), ৫. মাসজিদ তৈরি করল, ৬. কারো দায়িত্বে কিতাব দিয়ে গেল ও ৭. এমন নেক সন্তান রেখে গেল, যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। ’ (মুসনাদ আল-বাজ্জার : ৭২৮৯)

অর্থাৎ সন্তানকে যদি সুশিক্ষা দেওয়া যায়, তাকে ছোট থেকেই সুশিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিকে অভ্যস্ত করা যায়, তাহলে মা-বাবার মৃত্যুর পরও সে ইবাদত-বন্দেগি করে মা-বাবার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, দোয়া করবে। যে দোয়ার সুফল তার মা-বাবা কবরে থেকেই পাবে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন কোনো লোক মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিন ধরনের আমল (জারি থাকে)। (প্রথম) সাদকা জারিয়া (চলমান সাদকা); (দ্বিতীয়) ওই ইলম, যা দ্বারা অন্য লোক উপকৃত হয়; (তৃতীয়) নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৬৫১)

তাই একটি সন্তান গর্ভে আসার পর থেকে তার সঠিক পরিচর্যার দায়িত্ব মা-বাবার ওপর চলে আসে। গর্ভে আসা সন্তান যেন শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে, সে জন্য তার মা-বাবাকে অনেক আগে থেকে দোয়া শুরু করতে হয়। সহবাসকালে মহান আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্রই সন্তানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে তার কানে আজান দিতে হয়। এটি রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। রাসুল (সা.) নিজেও তাঁর নাতি হাসান (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছিলেন।

উবাইদুল্লাহ ইবনে আবু রাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা (রা.) যখন আলী (রা.)-এর ছেলে হাসান (রা.)-কে প্রসব করলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কানে নামাজের আজানের মতো আজান দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১০৫)

সন্তানের কানে আজান দেওয়ার পদ্ধতি কী হবে, তাও বলে দিয়েছেন মহানবী (সা.)। হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৮৬১৯)

এই হাদিসগুলোর সনদের ব্যাপারে কোনো কোনো মুহাদ্দিসের ভিন্ন মত থাকলেও নবজাতকের কানে আজান ও ইকামত দেওয়া মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরাম একমত।

এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই শিশুর জন্য গুনাহমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, তার সামনে কোনো অসৌজন্যমূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকা। কারণ পরিবারের মানুষগুলোর আচার-আচরণ শিশুরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া তাদের পরিচ্ছন্নতা শেখানো, সৃজনশীল (জায়েজ) কাজে উৎসাহ দিয়ে তাদের মেধা বিকাশে সহযোগিতা করা মা-বাবার দায়িত্ব। এ ছাড়া তাদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারা, মহান আল্লাহর বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলতে পারা প্রতিটি মা-বাবার সবচেয়ে বড় সফলতা। যদি সন্তানকে মহান আল্লাহর বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত ও সচেতন করা যায়, তবে সন্তান মা-বাবার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের অমূল্য সম্পদ হবে। মহান আল্লাহ সবার বোঝার তাওফিক দান করুন।
তথ্যসূত্র: বিডি-প্রতিদিন